জেনে নিন ছুলির খুঁটিনাটি
এই গরমে নানা রকম ফাঙ্গাল বা ছত্রাকজনিত রোগ অনেক বেশি দেখা যায়। ফাঙ্গাল ইনফেকশন আমাদের বডি সারফেস বা ত্বকেই বেশি হয়ে থাকে। এমন-ই একটি ফাঙ্গাল বা ছত্রাকজনিত রোগের নাম ছুলি। একে অনেক সময় স্থানীয় ভাবে ছইদ বা ছউদ ও বলা হয়। আসুন ছুলি সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই।
অণুজীব সম্পর্কেঃ
ছুলি একটি চর্মরোগ। ইংরেজী নাম পিটাইরিয়াসিস ভার্সিকোলার (pityriasis versicolor) বা টিনিয়া ভার্সিকালার (Tinea versicolor), গ্রীষ্মকালে বেশি হয়। চামড়ায় ঘাম বেশি জমা হলে ম্যালাসেজিয়া ফারফার (প্রাক্তন নাম পিটাইরোস্পোরাম অরবিক্যলার) নামের ঈস্ট খুব বৃদ্ধি পায়। এই ঈস্ট সাধারণ চামড়াতেও থাকতে পারে কিন্তু এত বেশি না। এরা ত্বকে কোন প্রকারে অসুবিধা না করেই পরজীবী হিসেবে অবস্থান করে এবং ত্বক নিঃসৃত তেল ও মৃত ত্বকের কোষকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যদি কোন কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন-ই রোগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
কারণঃ
০১. গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া
০২. প্রচুর ঘামা
০৩. তৈলাক্ত ত্বক
০৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
০৫. বহু দিন থেকে অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হতে পারে
০৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে সংক্রমণ হতে পারে
০৭. কারও হয়েছে, এ রকম ব্যক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকলে বা সংস্পর্শে এলে সংক্রমণ হতে পারে
০৮. তরুণ বয়সে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি
০৯. সাধারণত ট্রপিক্যাল এলাকাতে আক্রান্ত বেশি হয়
লক্ষণঃ
সাধারণত ঘাড়ে বা পিঠে ছোট ছোট উপবৃত্তাকার ছোপ ছোপ দাগ- ফরসা ত্বকে গাঢ় (সাধারণত গোলাপি,খয়েরী), শ্যামলা ত্বকে হালকা রঙের। অনেকগুলো দাগ একসাথে মিশে বড় দাগের সৃষ্টি করতে পারে। গরম বাড়লে চুলকানি বা জ্বালাভাব থাকে। যেখানে বেশি হয়, সেখানে চামড়া উঠে যেতে পারে। শীতকালে ছুলি নিজে থেকেই কমে যায়।
কোথায় হয়ঃ
শরীরের বুক, পিঠ, গলা এবং হাতে বেশি দেখা দিয়ে থাকে। কোন কোন সময় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মুখেও দেখা দিতে পারে। এছাড়া অন্যান্য অংশেও হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ঃ
সাধারণত আক্রান্ত অংশ দেখেই রোগ নির্ণয় করা যায়। এছাড়া ত্বকের ফাঙ্গাস পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ খুব সহজেই নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসাঃ
চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী। আপনার যদি ছুলি মনে হয় তাহলে চিকিৎসকের কাছে যান এবং নিশ্চিত হয়ে ওষুধ সেবন করুন।
– সাধারণত সেলেনিয়াম সালফাইড কিংবা ছত্রাকনাশক অন্যান্য ওষুধ, সাবান বা শ্যাম্পু বা ক্রিম ব্যবহার করতে বলা হয়।
– মুখে খাওয়ার ছত্রাকনাশক ওষুধ দেয়া হয়।
– প্রপিওলিন গ্লাইকল/সোডিয়াম থায়ওসালফেট দেয়া হয়।
একেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে একেক রকম চিকিৎসা পদ্ধতি। চিকিৎসা করলে অধিকাংশ সময়েই আশানুরূপ ফলাফল পাওয়া যায়।
ব্যবহারবিধিঃ
প্রথমে গোসল করে গা শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর ছত্রাকনাশক ক্রিম দিনে ২ বার লাগাতে হবে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ। শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাগিয়ে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এসব কিছুই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।
উপশমে যত্নঃ
ওষুধ গ্রহণের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে চলতে হবে।
০১. নিয়মিত ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে হবে।
০২. গ্রীষ্মকালে সুতির জামাকাপড় পরতে হবে।
০৩. যতদূর সম্ভব কম ঘামার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য রোদে বেশি যাওয়া যাবে না।
০৪. মেনথল যুক্ত সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে।
০৫. বাচ্চাদের পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
০৬. তৈলাক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে চলতে হবে।
প্রতিরোধঃ
সাধারণ ভাবে সবার-ই নিজের যত্ন নেয়া উচিত যাতে শুধু ছুলিই নয়, অন্যান্য ছত্রাকজনিত রোগ-ও যেন না হয়।
– গরমকালে পাতলা ঢিলেঢালা পোশাক বেছে নেয়া
– গরমে শরীরে ঘাম ও তেল নিঃসরিত হয়ে থাকে, যা ফাঙ্গাসের বৃদ্ধির সহায়ক, গোসল এবং সাবান ব্যবহারের মাধমে ঘাম ও তেল দূর করতে হবে।
– গোসলের পর গা ভালো করে শুকানো। তেমনি ঘর্মাক্ত অবস্থায় বেশিক্ষণ না থাকা।
– রোদ থেকে বাঁচার জন্য সানব্লক এবং ছাতা ব্যবহার করা।
– ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা।
– দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়া।
– ভালো ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করা।
– পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
– প্রচুর পানি পান করা।
– সর্বাঙ্গীণ পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা।
এভাবেই ছুলি চিনুন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করুন এবং সুস্থ থাকুন।
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।