এপথাস আলসার ( মুখের ঘা )

sajsojja
কারো কারো মুখে প্রায়ই ঘা হয়, ঘন ঘন হওয়া এই ঘা কে এপথাস বলে। এটি মুখের ভেতরে সবখানে হতে পারে। মুখে এপথাসই সবচেয়ে বেশি হয়। পাঁচ জনের মধ্যে এক জন জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে আক্রান্ত হবেই। মহিলাদের পুরুষ থেকে বেশি হয়। চিকিৎসা ছাড়া ১০-১৪ দিনের মধ্যে এটি ভালো হয়ে যায়। ১০ থেকে ৪০ বছরের মানুষের বেশি হয়। বয়সের সাথে সাথে ঘন ঘন হওয়াটা কমে যায়।

এপথাস আলসার তিন ধরনেরঃ

০১. মাইনর আলসার

এটিই সবচেয়ে বেশি হয়। ১০ জনের মধ্যে ৮ জন লোকেরই মাইনর আলসার হয়ে থাকে। এটি ছোট, গোলাকার অথবা ডিম্বাকার হতে পারে। এটি সাধারণত আকারে ১০ মিলি মিটার অপেক্ষা কম হয়ে থাকে। এর রঙ হালকা হলুদ, কিন্তু এর চারপাশের অংশ ফোলা ও লাল হয়। সাধারণত একটি হয় তবে ৫ টি পর্যন্ত হতে পারে। ৭-১০ দিন থাকে এবং ওষুধ ছাড়াই সেরে যায়, কোন দাগ ফেলে না। মাইনর আলসারে ব্যথা থাকেনা বললেই চলে।

০২. মেজর আলসার

শতকরা ১০ ভাগের মেজর আলসার হয়। এর আকার ১০ মিলি মিটার থেকে বড় হয়। একবারে একটি বা দুটি হতে পারে। এর বেশি নয়। দুই সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস থাকতে পারে। এতে অনেক ব্যথা হয়। এমনকি খেতেও কষ্ট হয়।

০৩. হার্পেটিফর্ম আলসার

এটি ১০ জনে ১ জনের হতে পারে। ক্ষুদ্র, পিনের মাথার ন্যায় দেখতে, এর আকার ১-২ মিলি মিটার। এক সাথে অনেক গুলো হয় এবং মাঝে মাঝে একসাথে মিলিত হয়ে অসমান, এবড়ো থেবড়ো আকার ধারণ করে। প্রতি আলসার ১ সপ্তাহ থেকে ২ মাস থাকে। নাম ছাড়া হারপিস ভাইরাস বা হারপিস রোগের সাথে এর আর কোন মিল নেই ।

এপথাস আলসারের কারণঃ

এর কারণ অজানা। কোন ইনফেকশনের জন্যে হয় না। তাই আপনি একে আগেই ধরতে পারবেন না। এরা সাধারণত আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ মানুষের কোন কারণ ছাড়াই হয়।

এর সঠিক কোন কারণ নেই কিন্তু কিছু ফ্যাক্টর বা রোগ এর জন্যে দায়ী। যেমনঃ

০১. আঘাতঃ কৃত্তিম দাঁতের পাটি ঠিক ভাবে ফিট না হলে , অসমান টুথব্রাশের আঘাতে হতে পারে।

০২. হরমোনের লেভেলের পরিবর্তনঃ কারো কারো পিরিয়ড হওয়ার আগে হয়। কারো কারো মেনপজের পরে হতে পারে।

০৩. কিছু কিছু মানুষের সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেয়ার পর হতে পারে।

০৪. আয়রন, ভিটামিন বি-১২ ০ ফলিক এসিড এর অভাবেও হতে পারে।

০৫. কখনো কখনো কিছু ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও হতে পারে। যেমন- অরাল নিকোটিন থেরাপি, নিকোরানডিল, এন্টি ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ ইত্যাদি। এলারজির কারণেও হতে পারে।

০৬. মানসিক চাপ, উদ্বিগ্নতার জন্যে হতে পারে। বংশগত কারণেও হতে পারে।

০৭. ক্রন’স ডিজিজ, সিলিয়াক ডিজিজ, এইচ আই ভি ইনফেকশনে আক্রান্ত মানুষের মুখের ঘা হতে পারে। কিন্তু এটি এপথাস টাইপ নাও হতে পারে।

এপথাসের পাশাপাশি অন্য সমস্যা থাকলে ডাক্তার কে বলুন। যেমন – চর্ম ও যৌন রোগ, বাতের ব্যথা, কোন ইনফেকশন। যদি মুখের অন্য কোন ঘা বলে সন্দেহ হয় তবে ব্লাড টেস্ট বা অন্যান্য ইনভেস্টিগেশন করান।

চিকিৎসাঃ

এর কোন ওষুধের প্রয়োজন নেই। সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু ব্যথা বেশি হলে বা তাড়াতাড়ি ঘা শুকাতে ওষুধ ব্যবহার করা লাগতে পারে। এখানে কিছু ওষুধের নাম দেয়া হল যা ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই দোকান থেকে কিনতে পারা যায়।

– ক্লোরহেক্সিডিন মাউথ ওয়াশ

– স্টেরয়েড লজেঞ্জেস

– ব্যাথা নাশক স্প্রে, রিন্স, জেল ( বেঞ্জাইডামিন স্প্রে )

– ব্যারিয়ার পেস্ট বা পাউডার ( কারমেলোজ সোডিয়াম )

এপথাস আলসার হলে মেনে চলতে হবে এমন কিছু নিয়মাবলীঃ

– মশলাদার খাবার, অম্ল জাতীয় পানি, খুব লবণাক্ত খাবার যেমন ক্রিস্প এড়িয়ে চলতে হবে। এরা ব্যথা আরও বাড়িয়ে দেয়।

– পানীয় পান করা কালে স্ট্র ব্যবহার করতে হবে। যাতে মুখের সামনের অংশের ক্ষতে না লাগে। গরম পানীয় স্ট্র দিয়ে পান না করাই ভালো, এতে গলা জ্বলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

– নরম ব্রাশ ব্যবহার করতে হবে। দাঁত ফিটিং ঠিক না হয়ে থাকে ডেন্টিস্ট দেখাতে হবে। কোন ওষুধের প্রভাবে হচ্ছে মনে হলে তা পাল্টাতে হবে। যেমন ওরাল নিকোটিন থেরাপি ( গাম বা লজেঞ্জেস) এর পরিবর্তে নাকের স্পে বা প্যাচ ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।