ত্বকের যত্নে তেল

sajsojja
যুগ যুগ ধরে রূপচর্চা ও সৌন্দর্য্য রক্ষায় বিভিন্ন রকমের তেলের ব্যবহার প্রচলিত রয়েছে। সবচেয়ে পরিচিত ও কার্যকরী তেল সমূহের মধ্যে আছে নারিকেল তেল, কাঠ বাদাম তেল, তিলের তেল, জলপাইয়ের তেল, রেড়ির তেল ইত্যাদি। তাছাড়া আজকাল নানা রকমের এসেন্সিয়াল ওয়েল ও ‘বায়ো ওয়েল’ নামে জনপ্রিয় তেল রয়েছে, যা ত্বক সুরক্ষায় যাদুর মত কাজ করে। একেক রকমের তেলে রয়েছে একেক একেক রকম গুণাগুন। কোনটা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে, কোনোটা শুষ্কতা দূর করতে এবং কোনো কোনো টা নানাবিধ সমস্যা নিরসনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আজকের লেখায় কোম্পানী ভেদে তেল গুলোর ভালো-খারাপ দিক নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত জানানোর চেষ্টা করছি-

কাঠ বাদাম তেল বা আমন্ড ওয়েলঃ

এই তেল কাঠ বাদামের তেলের চেয়ে আমন্ড অয়েল নামেই বেশি পরিচিত। ত্বক ও চুলের যত্নে এ তেলের জুড়ি মেলা ভাড়। কারণ আমন্ড বা কাঠ বাদাম হচ্ছে ভিটামিন ও মিনারেলের অনেক ভালো উৎস, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই । আর আপনারা নিশ্চয়ই জানেন ত্বক সুরক্ষায় ভিটামিন ই কতটা জরুরী। এই তেল সব ধরণের ত্বকের জন্য উপযোগী। আমাদের দেশে যে সব ব্র্যান্ডের আমন্ড অয়েল সহজলভ্য সেগুলো হল –

– ওয়েল’স

– বাজাজ আমন্ড ড্রপস

– নিহার

– ডাবর

আমি ওয়েল’স এর আমণ্ড ওয়েল ও বাজাজ আমন্ড ড্রপস নিয়ে আমার মতামত শেয়ার করছি –

ওয়েল’স আমন্ড ওয়েলঃ

বাজারে প্রচলিত বাদাম তেল গুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে ভালো। এই তেলে ত্বক বা চুলের কথা বিশেষ ভাবে বলা থাকে না বলে আপনি ত্বক ও চুল উভয় ক্ষেত্রেই এটি ব্যবহার করতে পারেন স্বাচ্ছ্বন্দে। এটি পরিষ্কার কাঁচের বোতলে মেটালের ঢাকনার সাথে থাকে। এই তেল অন্য সব আমন্ড থেকে আলাদা এ জন্য যে তেলটি স্বচ্ছ্ব ও পরিষ্কার এবং নন স্টিকি। এবার চলুন জেনে নিই এর দরদাম ও সহজলভ্যতা নিয়ে।

৭০ মিলি ওয়েল’স আমন্ড ওয়েল কিনতে আপনার খরচ পড়বে ১২০-১৭০ টাকার মত (দোকান ভেদে ভিন্ন হতে পারে)। যে কোন শপিং মল কিংবা সুপার শপ থেকে কিনতে পারবেন ওয়েল’স আমন্ড অয়েল। যেমন-বসুন্ধরা সিটি, আলমাস সুপার শপ,আগোরা, নন্দন, মীনা বাজার, গাউসিয়া এবং আরো অনেক মার্কেটে পাওয়া যাবে এই আমন্ড ওয়েলটি। এবার জানিয়ে দেই এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।

উপকারিতাঃ

– ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও হারানো জেল্লা ফিরিয়ে আনে ।

– ত্বকের গভীরে গিয়ে পুষ্টি যোগায়।

– ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে ত্বকের আর্দ্রতাত বাড়ায়।

– ত্বকের চুলকানি, র‌্যাশ ও ফোলা ভাব কমায়।

– বয়সের দাগ-ছোপ রোধ করে।

– চোখের নীচের কালি বা ডার্ক সার্কেল হালকা করে।

– ত্বকের রুক্ষতা দূর করে কোমল ও মসৃণ করে তোলে।

– ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করে।

– শরীরের চুলকানি ও র‌্যাশ কমায়।

– চুল সুন্দর, সিল্কী ও মজবুত করে।

– চুল পড়া কমায়।

– চুল বৃদ্ধির হার বাড়ায়।

– মাথার ত্বকে আমন্ড ওয়েল ম্যাসাজে মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।

অপকারিতাঃ

– দামের তুলনায় পরিমাণ খুবই কম।

– কাঁচের বোতলে থাকার কারণে সাবধানে ব্যবহার করতে হয়, নয়ত পড়ে ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

বাজাজ আমন্ড ড্রপসঃ

বাজাজ আমন্ড ড্রপস তেলটি মূলত চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এটি ত্বকে ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি ভারতে উৎপাদিত। তাই ৪২ রূপির হলেও আমাদের দেশে দাম একটু বেশি পড়ে যায়। ১০০ মিলি বাজাজ আমন্ড ড্রপস এর দাম ১৩০-১৮০ টাকা। যে কোন শপিং মল কিংবা সুপার শপ থেকে কিনতে পারবেন ওয়েল’স আমন্ড অয়েল। যেমন – বসুন্ধরা সিটি, আলমাস সুপার শপ, আগোরা, নন্দন, মীনা বাজার, গাউসিয়া এবং আরো অনেক মার্কেটে পাওয়া যাবে এই আমন্ড অয়েলটি।

উপকারিতাঃ

এতে আমন্ড ওয়েলের নিজস্ব ভিটামিন ই ছাড়াও আলাদা ভাবে ভিটামিন ই যোগ করা হয়েছে। এক বোতল অনেকদিন যায়। চুলের পরিপূর্ণ পুষ্টি যোগায়। দামের তুলনায় খুবই ভালো। এক্সট্রা ভিটামিন ই থাকায় চোখের পাপড়িতে ব্যবহার যোগ্য এবং পা্পড়ি ঘন ও মসৃণ করে।

অপকারিতাঃ

শুধু চুলে ব্যবহার করা যায়, ত্বকে নয়।

কাঁচের বোতল হওয়াতে আবারো আগের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। শ্যাম্পু করার সময় অনেক চুল পড়ে। মিনারেল অয়েল থাকে। এবার চলুন জেনে নিই অতি জনপ্রিয় বায়ো অয়েল সম্পর্কে –

বায়ো অয়েলঃ

বায়ো অয়েল বিশ্ব সমাদৃত থেরাপেটিক অয়েল। এটি মূলত স্কার, স্ট্রেচ মার্ক ও বয়সের ছাপে বেশি ব্যবহৃত হয়। অরিজিনাল বায়ো অয়েল সাউথ আফ্রিকাতে প্রস্তুত করা হয়। একই রকম ভাবে আরো অনেক দেশে বায়ো অয়েলের মত তেল তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে সিঙ্গাপুরের তৈরি ‘আরো বায়ো সেরাম’ নামে একটি তেল পাওয়া যায়, যা মূলত বায়ো অয়েলেরই ডুপ্লিকেট। বায়ো অয়েল আমাদের দেশে পাওয়া যায় না, আপনি যদি অরিজিনাল বায়ো অয়েল কিনতে চান তবে অনলাইনে অর্ডার দিতে হবে বা আপনার যদি আত্মীয় থাকে দেশের বাইরে তো তাদের দিয়ে আনাতে পারবেন। ড্রাগস্টোর, সুপারড্রাগ, উলটা সহ বিভিন্ন সাইট থেকে বায়ো ওয়েল অর্ডার করতে পারবেন। আমি কোন বিজনেস পেজের কথা লিখছি না কারণ আপনারা যে যার সাথে কেনাকাটা করতে অভ্যস্ত কিংবা স্বাচ্ছ্বন্দ্য বোধ করবেন, তাকে দিয়েই আনাতে পারেন। বাংলাদেশি টাকায় ৬০ মিলি বায়ো অয়েলের দাম পড়বে ৮৫০-১৩০০ টাকার মত। সাইট ও পেইজ ভেদে দাম দরের পরিবর্তন হতে পারে। আর যদি ‘আরো বায়ো সেরাম’ কিনতে চান, তবে তা পাবেন ৫০ মিলি ৬০০-৭৫০ টাকায়। কলাবাগান, শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, গুলশান ও বড় বড় যে কোন ফার্মেসী তে ‘আরো বায়ো সেরাম’ পাওয়া যায়। এবার আসুন জেনে নিই বায়ো ওয়েলের ভালো ও খারাপ দিক সম্পর্কে –

উপকারিতাঃ

-ছোট-বড় স্কারের দাগ সারাতে সাহায্য করে। নতুন স্কার দ্রুত মিলিয়ে যায়, পুরনো হলে সারতে একটু সময় লাগে।

-স্ট্রেচ মার্ক কমায়।

-ব্রণের দাগ সারাতে সাহায্য করে।

-রোদে পোড়া দাগ কমায়।

-ত্বকের র‌্যাশ-ব্রণ, চুলকানি কমায়।

-শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা যোগায়।

-ডার্ক সার্কেল হালকা করে।

-প্রতিদিনের ত্বকের চাহিদা মেটায়।

-ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ তথা বলিরেখা পড়তে দেয় না।

-ত্বককে তেল চিটচিটে করে না।

-সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যায়।

-সুন্দরভাবে ত্বকের সাথে মিশে যায়।

-প্রিজারভেটিভ নেই।

-গোসলের পানিতে ব্যবহারে তরতাজা অনুভূতি দেয়।

অপকারিতাঃ

এর উপাদানে মিনারেল অয়েল ছাড়া তেমন কোন অপকারিতা পাই নি।
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।