চুলের যত্নে ১১টি ফলের রসের কার্যকারীতা সম্পকে জেনে নিন

চুলের যত্নে ১১টি ফলের রসের কার্যকারীতা
আপনি কি জানেন তাজা সবজি এবং ফল থেকে পাওয়া রস আপনার চুল স্বাস্থ্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে? হ্যাঁ, আপনার দৈনন্দিন খাদ্যের মধ্যে এই যে  রস  রয়েছে তা আসলে  আপনার চুলের যত্নের চাহিদা মেটাতে পারে। তাজা ফল ও সবুজ শাক সবজি আমাদের শরীরের পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে  চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। টাটকা ফল ও সব্জির রস চুল ভাঙ্গনের সম্ভাবনা হ্রাস করা এবং  একই ভাবে চুল বৃদ্ধি  করতে সহায়তা করবে। রস থেকে পুষ্টি দ্রুত আমাদের শরীরের মধ্যে শোষিত হয় এবং এর ফলাফল দ্রুত লাভ করতে পারি। আজকের পোস্টে চুল বৃদ্ধির জন্য এমনই কয়েকটি কার্যকর রস এর কথা উল্লেখ করলাম।

ঘৃতকুমারী বা অ্যালভেরার রসঃ
ঘৃতকুমারী গাছের রস চুল ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ঘৃতকুমারী উপস্থিত ভিটামিন চুলকে শক্তিশালী এবং চুলের ভঙ্গুর হওয়ার সম্ভাবনাকে কম করতে সাহায্য করে। ঘৃতকুমারীর পুষ্টিকর ও ময়শ্চারাইজিং রস মাথার খুশকির হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে।আপনার চুলে  ঘৃতকুমারীর রস নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল হয়ে উঠবে চিকন ও নরম। এই রস চুল বৃদ্ধির জন্য সেরা রস। নতুন চুল গজানোর জন্য অ্যালভেরার রস নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসেজ করে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন, সপ্তাহে ২ বার করে ২ মাস। পরিবর্তন নিজেই লক্ষ করতে পারবেন। এ ছাড়াও অ্যালভেরার রস চুল কে কন্ডিশনিং করে মোলায়েম হতে সাহায্য করে যা অনেকদিন স্থায়ী থাকে। এমনকি এটি রক্তের কলেস্টরেল দূর করতে সাহায্য করে।

কিউই রসঃ
কিউই রস দ্রুত চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিউই রস ভিটামিন ই, সমৃদ্ধ হওয়াতে এটি দ্রুত চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিউই রস শরীরে শোধক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। ফলে এটি সহজেই শরীরের দূষিত জিনিস বেড় করে দিতে সাহায্য করে। এতে চুলে দ্রুত বৃদ্ধিতে প্রভাব পরে। কিউই রস চুলের গোঁড়া শক্ত করতে সাহায্য করে।

পেঁয়াজ রসঃ
পেঁয়াজ রস সরাসরি মাথার লাগানো যায়। পেঁয়াজ রস চুল বৃদ্ধিতে ও চুলকে সাদা হতে বাধা দেয় পেঁয়াজ সালফারের সমৃদ্ধ উৎস। চুল গজানোর জন্য এ উপাদানটি খুবই জরুরি। চুল পড়া রোধ ও নতুন চুল গজানোর সহায়তার জন্য এটা অনেক আগে থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে।একটি মাঝারি আঁকারের পেঁয়াজ নিন। পেঁয়াজটি কুচি করে কেটে কিংবা গ্রেটারে গ্রেট করে নিয়ে চিপে এর রস বের করুন। যদি প্রয়োজন বোধ করেন তো ২টি পেঁয়াজ নিতে পারেন। এই পেঁয়াজের রসে ২ চা চামচ মধু দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে চুলের গোড়ায় লাগাবেন। সব চাইতে ভালো ফল পেতে এই মাস্কটি রাতে ব্যবহার করুন। পুরো রাত এই হেয়ার মাস্কটি চুলে লাগিয়ে রাখুন। সকালে হালকা কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩/৪ বার ব্যবহারে দ্রুত ফল পাবেন।

পালং শাক রসঃ
এটি  ত্বক ও চুলের জন্য অত্যন্ত উপকারী সব্জি। যা বিভিন্ন খনিজ পদার্থ, ভিটামিন, আয়রন ইত্যাদি সমৃদ্ধ। পালং শাকের অনেক প্রয়োজনীয় উপকারিতার মধ্যে আরেকটি হচ্ছে নিয়মিত পালং শাক খাওয়ার মাধ্যমে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে পারেন নিজের ত্বক। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি যা সূর্যের ক্ষতিকারক আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। পালং শাক চুলের বৃদ্ধি ত্বরাণ্বিত করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন বি, সি এবং ই, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সহ আরও অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান যেগুলোর সবই চুলের বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভুমিকা পালন করে থাকে। পালং শাকে থাকা আয়রন চুলের ফলিকলে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে যার ফলে চুল ঠিক মতো বাড়ে এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়।চুল পড়া রোধ করতে নিয়মিত পালং শাক খান। কারণ পালং শাকে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স চুলের গোঁড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক গ্লাস পালং শাকের জুস খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে ১ কাপ পালং শাক এবং পরিমাণ মতো পানি ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে জুস বানিয়ে পান করতে পারেন। খেতে একটু কষ্ট হলেও ফলাফল টা কিন্তু মধুর হবে। চাইলে পালং শাকের সাথে টমেটো, শশা বা অন্যান্য সবজি মিক্স করতে পারেন।

পেয়ারা রসঃ
পেয়ারাতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি – অক্সিডেন্ট, আর আছে কালসিয়াম , আইরন ও ফলিক এসিড।পেয়ারার রস ও খালি পেয়ারা , যে কোন ভাবেই এটি গ্রহন করা যেতে পারে । পেয়ারার পাতা ২০ মিনিট সিদ্ধ করে , সেই জল চুলে প্রয়োগ করতে পারেন এটি চুল পরা প্রতিরোধ করে ।

রসুন রসঃ
রসুনের ব্যবহার  চিকিত্সা ক্ষেত্রে সেই ঐতিহাসিক কাল থেকে চলে আসছে। রসুন চুলের মান বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং চুলে পুষ্টি  যোগায়। মাথায় রক্ত সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এটি চুলের নিষ্প্রভতা দূর করে এবং চুল মসৃণ করে তোলে। রসুনের রস সপ্তাহে একদিন মাথার স্কাল্পে লাগালে কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন অনেক নতুন হেয়ার গ্রোথ হয়েছে |

শসার রসঃ

খনিজ উপাদানসমৃদ্ধ শসা নখ, দাঁত ও মাড়ির জন্য ভালো। চুল ও নখকে উজ্জ্বল করে। শশায় আছে সালফার ও সিলিকা নামের দুটি উপাদান, যা আমাদের মাথার চুল ও নখকে উজ্জ্বল  ও শক্ত করে তোলে। এগুলো চুলের বৃদ্ধিকেও তরান্বিত করে। নিয়নিত শসার রস  পান করলে শরীরের ইউরিক এসিডের ব্যথা দূর হয়।শসা রস চুলের  সঠিক বৃদ্ধির সহায়তা করে এবং চুল মান উন্নত করে। এক গ্লাস প্রতিদিন শসার রস পান করুন। এই রস চুলের সমস্যার আরোগ্যকরণ সহায়তা করবে।ধনে পাতার রসঃ
ধনে পাতার রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ।বাজারে এখন এর দাম সহনীয় কাজেই আমরা যদি মাঝে মাঝে খাবারের বা সালাডের সাথে পরিমিত মাত্রায় এটি খেতে পারি তাহলে অনেক ধরনের রোগ-বালই প্রতিরোধ সম্ভব হবে। ধনেপাতায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’ , ফলিক এসিড  যা ত্বকের উপকারের জন্য যথেষ্ট প্রয়োজনীয়। এই ভিটামিনগুলো প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায়, ত্বক, চুলের ক্ষয়রোধ করে, মুখের ভেতরের নরম অংশগুলোকে রক্ষা করে। ধনেপাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাছাড়া চুল পড়া রুখতে ধনে পাতা রসের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রয়েছে।সবুজ ধনে পাতার রস নিয়মিত চুলে লাগালে, চুল পরা বন্ধ হয় এবং নতুন চুল গজায়।

গাজরের রসঃ
গাজরের রস একটি গুরুত্বপূর্ন পুষ্টিকর রস। ভিটামিন সি যুক্ত এই রস চুলের জন্য খুবই উপকারি।গাজরের রসে আছে বিটা–ক্যারোটিন যা চুলের জেল্লা বাড়াতে ও চুলের প্রাকৃতিক বর্ণ বজায় রাখতে সাহায্য করে । চুলের গোঁড়া মজবুত করতে ও পুষ্টি যোগাতে এটি অনেক ভূমিকা পালন করে ।

স্ট্রবেরির রসঃ

স্ট্রবেরির রস এ আছে প্রচুর ভিটামিন–সি, চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে ও চুলে প্রোটিনের অভাব পুরন করে । মাথার ত্বকে স্ট্রবেরির রস নিয়মিত ব্যবহারে তা চুলের জেল্লা বাড়াতে সাহায্য করে ।

আমলকীর রসঃ

আমলকী চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।এটি চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে। আমলকীর রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম রুখতে সাহায্য করে।এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকী গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন। এ্যাসিডেটের সমস্যা কম রাখতে সাহায্য করবে।প্রতিদিন সকালে আমলকীর রসের সঙ্গে মধু মিশে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
এই রসের বিভিন্ন বেনিফিট পড়ার পর, আমি আপনাদের কাছে এখন নিশ্চয় এই আশাই করবো যে এখন থেকে রোজ কোন একটা জুস তো আপনার ডায়াটে থাকছে। এখন শুধু আপনাকে যা করতে হবে তা হল আপনার খাবার চার্টের তালিকায় কোন একটা জুস জুড়ে দিন। যখন যে রস সহজ লভ্য তাই পান করুন। দীর্ঘ চিকন চুল পেতে এই টুকু তো করাই যেতে পারে। এতে যে আপনারই লাভ!
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।