ত্রিশের পরেও অপরূপা

 ত্রিশের পরেও অপরূপাসৌন্দর্যের কদর হয় সব জায়গাতেই। সুন্দর চেহারা, সেই সাথে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব- এই দুইয়ে মিলেই বিচার করা হয় সৌন্দর্যকে। তাই শুধু সুন্দর মুখশ্রী হলেই যেমন হয়না, তেমনই শুধু মাত্র আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হলেও চলবে না। আধুনিক এই জীবন যাত্রায় ব্যক্তিত্বের আভা প্রকাশ করার পাশাপাশি নিজেকে সুন্দরভাবে তুলে ধরাটাও শিখতে হবে। আর নিজেকে একটু সুন্দর ভাবে তুলে ধরতে মেকআপ এর জুরি মেলা ভার। মেকআপ এর মাধ্যমে নিজেকে অন্যরূপে প্রকাশ করা নয় বরং স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে আরো একটু সুন্দর করে উপস্থাপন করাই হলো সাজসজ্জার মূল মন্ত্র। এই মেকআপ বা সাজ সজ্জাই প্রকাশ করে আপনার রুচিশীলতা অনেকাংশেই।

তারুণ্যের সাজ সজ্জায় মানিয়ে যায় সব কিছুই। কিন্তু এর পরে? ত্রিশ ঊর্ধ্ব বয়সটা এমন একটি সময় যখন বেশিরভাগ নারীরাই সমাজে নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত ও নানা কাজে ভালভাবে যুক্ত হয়ে যান। অনেকেই হয়তো কর্মক্ষেত্রে নিজের ভাল অবস্থান তৈরি করে ফেলেন, আবার কেউবা সংসার নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। এই বয়সটাকে একেবারে তরুণদের সাথে যেমন মেলানো যায় না, তেমনি আবার বয়স্ক নারীদের সাথেও তুলনা চলেনা।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তবে কি তারা সাজসজ্জা পরিহার করবেন? উত্তরটা হলো অবশ্যই না। শুধুমাত্র পরিণত বয়সে পৌঁছেছেন বলে সাজসজ্জা বাদ দিয়ে দিতে হবে কিংবা নিজের দিকে মনযোগী হওয়া যাবে না, সেই যুগ পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। নিজেকে সুন্দর করে তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা যেমন তরুন তরুণীদের আছে, তেমনটা আছে আপনারও। অন্য কারো জন্য না হোক, কেবল নিজের জন্য হলেও। তবে এ জন্য চাই বয়স অনুসারে সাজসজ্জা ও নিজের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরার মত জ্ঞান।

কেমন মেকআপ মানাবে?

একজন নারী যদি কিশোরীদের জন্য তৈরি পোশাক পরেন তবে তাকে দেখতে যেমন ভাল লাগবেনা, সাজসজ্জা বা মেকাপের বিষয়টিও ঠিক তেমনই। একজন কিশোরী মেয়ে বা তরুণীকে যেই মেকআপে দেখতে ভাল লাগবে ,তা একজন ত্রিশ ঊর্ধ্ব নারীকে কখনই মানাবে না। এবং এই জিনিশটিই বুঝতে হবে সবার আগে। এটা বুঝতে পারলেই নিজের জন্য সঠিক মেকআপ কোনটি হবে তাও বোঝা যাবে অতি সহজেই। প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে এমন নারীরা কিভাবে নিজেকে সুন্দর করে সাজাবেন যেখানে আমাদের দেশে মেকাপের নানা বিষয়ে তরুণীরাই বেশি প্রাধান্য পান? সেই সব প্রশ্নের জবাব দিতেই আমাদের আজকের এই আয়োজন।

ত্রিশের বেশি মানেই যে মেকআপ সংক্রান্ত কোন উপকরণ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিতে হবে তা নয়। আসল হল সেই উপকরণটির সঠিক ব্যাবহার কিভাবে হবে তা বুঝতে পারা। রইলো অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু টিপস-

১. ফাউন্ডেশন টিএক্সপসঃ

ভারি ফাউন্ডেশন ও বেশি ফেস পাউডার এড়িয়ে চলুন আপনার ত্বক ও আপনার বয়স উভয়ের কথা ভেবেই। এর বদলে ব্যবহার করতে পারেন লুজ পাউডার বা মইশ্চেরাইজার সমৃদ্ধ টিন্টেড কোন ক্রিম বা মুজ। সেই সাথে নিজের ত্বকের ধরন ও রঙ অনুযায়ী মেকআপ সরঞ্জাম ব্যাবহার করবেন, অযথা হালকা রঙের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করতে যাবেন না। এমনটি করলে অল্প সময় পরেই মেকআপ নষ্ট হয়ে আপনাকে বাজে দেখাতে পারে। এছাড়া মেকআপ শুরু করার আগে ত্বকে ফেস প্রাইমার ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার ত্বকের বলিরেখা কম দেখাবে ও সেই সাথে রঙের সমন্বয় ঘটবে এবং ত্বকে ফাউন্ডেশন ও ব্লাশন ঠিক থাকবে অনেক সময় পর্যন্ত। কন্সিলার ব্যবহার করার সময় মাথায় রাখবেন যে হালকা রঙের কন্সিলার যেন ব্যবহার করা না হয়। এতে ত্বকের নানা খুঁত ঢেকে যাবার বদলে তা আরও প্রকট হয়ে ফুটে উঠবে। ত্বকের রঙের সাথে সামঞ্জসসপুর্ন কন্সিলার ব্যবহার করুন।

২. ব্রোঞ্জার টিপসঃ

ত্বকে উজ্জ্বলভাব আনতে ব্যাবহার করতে পারেন ব্রোঞ্জার। চেহারায় অল্প করে পিচ রঙের ব্রোঞ্জারের ব্যবহার আপনার ত্বকে সতেজ ও তেজিভাব এনে দিবে। তবে যেকোনো গাড় রঙের ব্রোঞ্জার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন যেমন মেরুন, বাদামি বা পঙ্কিল ইত্যাদি। এসব রঙ আপনার চেহারার সতেজ ভাব নষ্ট করে তুলতে পারে সেই সাথে আপনাকে দেখাবে আরও বয়স্ক। এবং খেয়াল রাখবেন সম্পূর্ণ চেহারায় ব্রোঞ্জার ব্যবহার করার দরকার নেই, শুধুমাত্র যেসব জায়গায় সূর্যের আলো সরাসরি পড়বে সেসব জায়গায় ব্যাবহার করতে হবে যেমন চিকবোনের উপরে ও নাকে ও কপালে সামান্য ছোঁয়া দিয়ে নিতে পারেন।

৩. ব্লাশন টিপসঃ

ব্লাশন বা ব্রোঞ্জার যেটাই ব্যাবহার করুন না কেন মনে রাখবেন গালের ফোলা অংশে তা ব্যবহার করবেন না । যেহেতু বয়সের সাথে সাথে ত্বকের চামড়া কিছুটা লুজ হয়ে যায় ও ঝুলে পড়ে তাই ফোলা অংশে এসব ব্যবহার করলে তা ত্বকের এই ঝুলে পড়াটা বেশি করে তুলে ধরতে সাহায্য করবে। এতে আপনাকে আপনার বয়সের থেকে বেশি বয়স্ক মনে হতে পারে। তাই চিকবোনের উপরে ব্যবহার করুন এসব উপকরণ। শুরু করতে পারেন চোখের নিচে থেকে এবং উপরের দিকে চিক বোনের শেষ পর্যন্ত টেনে দিয়ে নিতে পারেন। এতে চোখ উপরের দিকে উঠে আসবে এবং আপনার চেহারা থেকে বয়সের ছাপ অনেকটাই কমে যাবে অনেকটাই। আর একটা ব্যাপার হল যে ব্লাশন চিকবোনের উপরে ব্যবহার করলে ব্রোঞ্জার ব্যবহার করতে যাবেন না। ব্লাশন ব্যাবহার করলে, শুধু মাত্র নাকের উপরে ও কপালে ব্রোঞ্জার ব্যবহার করুন।

৪.লিপস্টিক ব্যবহার:

লিপস্টিক ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না এমন নারী খুব কমই পাওয়া যাবে। বেশির ভাগ নারীদের ধারনা লিপস্টিক একটু বয়স্কদের জন্য ভাল এবং লিপগ্লস কম বয়স্কদের জন্য। আসলে ব্যাপারটি ঠিক এর উল্টা। লিপস্টিক লিপগ্লসের তুলনায় কিছুটা শুকনা হয় ও ঠোটের সাথে মিশে থাকে। এতে ঠোটের আশেপাশে যেসব ভাঁজ পড়ে যায় তা আরও প্রকট হয়ে বোঝা যায়। অথচ লিপগ্লসের ব্যাবহার এই ভাঁজ অনেকটাই ঢেকে দিতে সক্ষম। তবে জলজলে, গ্লিটার দেয়া লিপগ্লস পরিহার করুন। এটি তরুণীদের জন্যই মানানসই। আপনার জন্য হালকা কোন রঙ বেছে নিতে পারেন। যদি ঠোটজোড়া আরো ভাল ফুটিয়ে তুলতে চান তবে ব্যবহার করতে পারেন লিপ লাইনার। যে রঙের লিপগ্লস ব্যবহার করছেন সেই রঙের লিপ লাইনার ব্যাবহার করুন। লিপ লাইনার ব্যবহার করার পরে আঙ্গুল দিয়ে হালকা করে ঘষে নিতে ভুলবেন না যেন। হালকা করে ঘষে নেয়ার পরে দিতে হবে গ্লস। লিপস্টিক যে একদম ব্যাবহার করতে পারবেন না তা কিন্তু নয়। ব্যবহার করতে পারেন তবে খেয়াল রাখবেন তা যেন মইশ্চারাইজার সমৃদ্ধ হয়। ম্যাট লিপস্টিক পরিহার করবেন।

৫. চোখের সাজের টিপসঃ

এই বয়সে চোখের সাজের জন্য লিকুইড আইনাইনার ব্যবহার করা একদম পরিহার করতে হবে। ব্যবহার করতে হবে আই পেনসিল। লিকুইড আইলাইনারের ছোট একটা পাতলা রেখাও চোখের আশেপাশের ভাঁজগুলোকে একদম স্পষ্ট করে তুলে আপনাকে অনেক বেশি বয়স্ক করে তুলে ধরবে মুহূর্তের মধ্যেই। তাই ব্যবহার করুন আই পেনসিল। আই পেনসিল দিয়ে চোখ সাজিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন। এতে চোখে হালকা সতেজভাব আসবে। আর চোখের সাজের ক্ষেত্রে দিনের বেলার জন্য হালকা ও ন্যাচারাল শ্যাডো ব্যাবহার করুন। মনে রাখবেন আপনার সাজের মূল লক্ষ্য হতে হবে চোখের হালকা সাজ, যেন চোখের আশেপাশে যেখানে বয়সের ছাপ সবার আগে পড়া শুরু হয় সেই অংশটি ফোকাসে না থাকে। রাতের সাজের ক্ষেত্রে গাঢ় রঙ ব্যবহার করতে পারেন তবে শকিং কোন শ্যাডো ব্যবহার করতে যাবেন না। এতে সবার নজর আপনার চোখের দিকেই যাবে।

চোখে প্রাইমার ব্যবহার করার আগে তা উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এমন উপকরণ সমৃদ্ধ কিনা তা দেখে নিন। এসব প্রোডাক্ট এড়িয়ে চলুন। কারন এই বয়সে চোখের কালো দাগ ঢাকার থেকে বেশি জরুরি হল সাজের সময় চোখের ফোলাভাব কমিয়ে আনা। এসব উপকরণ ব্যবহার করলে চোখের ফোলাভাব বেশি করে প্রকাশ পাবে। তাই এসব ব্যবহার করবেন না। সেই সাথে ভ্রু এর ক্ষেত্রে মনে রাখবেন, এই বয়সে পাতলা করে প্লাক করে রাখা ভ্রু এর বদলে যদি কিছুটা মোটা ও ভরাট করে ভ্রু প্লাক করে রাখা হয় তবে কপালের অংশ অনেকটাই তারূণ্যপূর্ণ বলে মনে হবে। সুন্দর করে ও বয়স অনুযায়ী ভ্রু ঠিকঠাক করে রাখলে কপালের ভাঁজগুলো অনেকটাই আড়ালেই চলে যাবে আপনার সুন্দর ভ্রু জোড়ার সামনে। ভ্রু পেনসিল দিয়ে ভ্রু আকার আগে খেয়াল রাখবেন তা যেন বেশি কালো মনে না হয়। এমনটা হলে দেখতে বাজে লাগবে।

জানা হয়ে গেল বয়স অনুযায়ী মেকআপ করার বিষয়টি। কিন্তু মনে রাখবেন মেকআপ বিষয়ে সঠিক ধারনা থাকার পাশাপাশি নিজের বিচার, বিবেচনা ও রুচিবধের সংমিশ্রণ না ঘটাতে পারলে অপরের সামনে নিজেকে সুন্দর করে তুলে ধরার ব্যাপারটাই ভেস্তে যাবে পুরোপুরি। তাই নিজেকে বুঝে, জেনে নিজের ব্যাক্তিত্ত্বের ও বয়সের সাথে সংমিশ্রণ ঘটিয়ে সেজে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরুন আত্মবিশ্বাসী নিজেকে।
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।