মেকাপ গলে যায়! কী হবে উপায়?

মেকাপ গলে যায়যারা নিয়মিত মেকাপ করে বাইরে যান বা লম্বা সময়ের জন্য মেকাপ করেন, তাদের অনেককেই কমবেশি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তার মধ্যে একটি সমস্যা হল মেকাপ গলে যাওয়া। অর্থাৎ বাড়ি থেকে পরিপাটি হয়ে বের হলেন, একটু গরমেই ঘেমে নেয়ে মুখের বিশ্রী দশা হয়ে গেলো! এরকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা আর আমাদের দেশের গরমকালে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে সামান্য গরমেই বেশ ঘাম হয়, যা মেকাপ গলে নষ্ট হয়ে যাওয়া বা কিছুক্ষণ পর ভেসে উঠার অন্যতম কারণ। আরেকটি সমস্যা হল মেকাপ করার কিছুক্ষণ পরে মুখটা তামাটে বা কালচে দেখায়। একে বলে মেকাপ অক্সিডাইযড হওয়া। এই অবস্থায় পড়তে হয়নি এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাতই কম নয়। এইগুলো এড়ানোর জন্য কী কী করা যেতে পারে, তাই নিয়েই আজকের লেখা।

প্রথমেই আসি মেকাপ গলে যাওয়া প্রসঙ্গে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় মেকাপ গলে যায় খুব সহজেই। প্রতিদিনের জন্য বা দিনের কোন দাওয়াতে যাবার সময় কিভাবে বেস মেকাপ করলে আপনার মেকাপ সহজে গলবে না, নিচের এই টিপসগুলো প্রয়োগ করলেই সেটা বুঝতে পারবেন।

  • মুখের বেস শুরু করার আগে মুখে এক টুকরো বরফ ঘষে নিন। মুখের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে এটি সাহায্য করবে। চাইলে বরফ ঘষার আগে স্ক্রাব করে নিতে পারেন এতে ত্বকের অমসৃণ ভাব কেটে যাবে এবং মেকাপ করার পর কেকি ভাবটা থাকবেনা।
  • ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, তবে অয়েল ফ্রি। আর যাদের ত্বক শুষ্ক তারা সাধারণ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
  • মেকাপ কে গলে যাওয়া থেকে রক্ষা করতে ও দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রাইমার এর জুড়ি নেই। আমাদের দেশে এর চল বেশ নতুন হলেও প্রায় ৩ বছর ধরে আমরা আমরা এর সঙ্গে পরিচিত। অনেকে ব্যবহারও করে থাকি। অনলাইনে অর্ডার করতে পারেন MUA, e.l.f এর প্রাইমার, দাম পড়বে ৭০০-৮৫০ এর মধ্যে আর দেশে পাওয়া যায় এমন প্রাইমার এর মধ্যে রয়েছে flormer, prestige এর প্রাইমার। দাম পড়বে ৬৫০-৯০০ এর মধ্যে। পাবেন আলমাস, নন্দন আর flormer এর নির্ধারিত কাউন্টার গুলোতে। হাতে খুব অল্প পরিমাণ নিয়ে মুখে ঘষে ঘষে লাগিয়ে ফেলুন, নিখুঁত বেস তৈরি করতে সুবিধা হবে।
  • গরমে ফাউনডেশন এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। বিবি ক্রিম ব্যবহার করুন। যদি ব্যবহার করতেই হয় তবে অয়েল ফ্রি ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন। শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা ময়েশ্চারাইজারের সাথে সামান্য ফাউন্ডেশান মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এটি কাভারেজ এর পাশাপাশি মেকাপকে দীর্ঘস্থায়ী করে। এটি সেট করার জন্য ব্যবহার করুন কমপ্যাক্ট বা ফেসপাউডার। কন্সিলার দিয়ে ঢেকে ফেলুন খুঁতগুলো। সবশেষে ব্রাশ দিয়ে আরও এক পরত পাউডার বুলিয়ে নিন টি জোনে।
  • চোখের সাজের ক্ষেত্রে ম্যাট পাউডার বেসড আই শ্যাডো ব্যবহার করুন। দিনের বেলায় হালকা সাজের জন্য ব্যবহার করুন পেন্সিল কাজল ও পেন্সিল আইলাইনার। ছড়িয়ে যাওয়া রোধ করতে এর অপর হালকা পাউডার দিয়ে নিন। মাস্কারাও হতে হবে ওয়াটার প্রুফ। আর রাতের সাজের জন্য ওয়াটার প্রুফ আই লাইনার। এতে করে ঘাম হলেও তা থেকে চোখের সাজ নষ্ট হবেনা সহজে।
  • গরমে ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার সবচেয়ে সুবিধাজনক। সেমি ম্যাট হলেও সমস্যা নেই, তবে এর বাইরে না যাওয়াই ভালো। লিপস্টিক লাগানোর পর সামান্য পাউডার দিয়ে নিলে অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকবে।
  • ব্লাশন দেওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করুন পাউডার বেসড ব্লাশ। কনটোরিং এর জন্য ম্যাট ব্রঞ্জার বেছে নিন।
  • সবশেষে মেকাপ সেটিং স্প্রে ব্যবহার করুন। সেটিং স্প্রে না থাকলে সামান্য গোলাপজল স্প্রে করুন কারণ এটিও প্রায় একই ভাবে মেকাপকে সেট করার কাজ করে।
  • মেকাপ শেষ করার পর হাত দিয়ে মুখের ত্বক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। ঘাম হলে টিস্যু দিয়ে আলতো করে চেপে মুছে নিন। ঘষলেই মেকাপ নষ্ট হওয়া শুরু করবে।
  • যখনই অনুভব করবেন যে আপনার ঘাম হচ্ছে এবং মেকাপ গলে যাওয়ার পথে, টিস্যু দিয়ে আলতো করে চেপে শুধু ঘামটুকু মুছে নিন। সাবধানতার সঙ্গে কাজটি করবেন। বাইরে বের হলে ব্যাগে সবসময় টিস্যু রাখুন।
  • খুব বেশি প্রয়োজন না হলে গরমে দিনের বেলায় ভারি মেকাপ এড়িয়ে চলুন। কারণ গরমে যত বেশি মেকাপ করবেন, তা নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা ততটাই বেড়ে যাবে।

*মেকাপ কে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য সবসময় বিশেষ করে দিনের বেলা, যতটা সম্ভব অয়েল ফ্রি আর ওয়াটার প্রুফ মেকাপ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এর কোনও বিকল্প নেই। মুখের বেস থেকে শুরু করে কাজল, মাস্কারা, লিপস্টিক পর্যন্ত যতটা পারা যায়।

এরপর আসি মেকাপ এর পর ত্বক কালচে হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে। আপনি মেকাপের জন্য যে বেস, ব্যবহার করছেন তাতে থাকা পিগমেনট ও ময়েশ্চার আপনার ত্বকের নিঃসৃত স্বাভাবিক তেলের সাথে যদি কোন কারণে মিশে যেতে না পারে, তখন ত্বকের তেলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে যার ফলশ্রুতিতে আপনার ত্বক কালো দেখায়।

ফাউন্ডেশনে যেই মিনারেলস গুলো ত্বকের সঙ্গে বিক্রিয়া করে মেকাপকে অক্সিডাইযড করে সেগুলো হলো মেটাল অক্সাইড, টিটানিয়াম ডাইঅক্সাইড, আয়রন অক্সাইড ও জিঙ্ক অক্সাইড ।

  • যেহেতু তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের এই সমস্যায় বেশি পড়তে হয়, তারা মেকাপের সময় ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পূর্বে টোনার ব্যবহার করুন। এতে তেল এর নিঃসরণ কম হবে যাতে মেকাপ এর পরে তা ত্বকের সঙ্গে কোনো রকম বিক্রিয়া না করে। আর ফাউন্ডেশন এর সঠিক শেড নির্বাচন করাও এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।
  • খেয়াল রাখুন ফাউন্ডেশন এর গায়ে লেখা উপাদান গুলোর নাম। ২ টির বেশি অক্সাইড উপাদান থাকলে তা কেনা থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনার ফাউন্ডেশানে এগুলোর উপস্থিতি আপনার মেকাপ কালো হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
  • অনেকেই আছেন হাত দিয়ে ফাউন্ডেশান লাগান ও ব্লেন্ড করেন। এক্ষেত্রে হাত একদম শুষ্ক হওয়া বাঞ্ছনীয়। আপনার হাতের ঘাম ও আর্দ্রতা ফাউন্ডেশন ও মুখের সাথে মিশে মেকাপ কে অক্সিডাইযড করে ফেলে।
  • বেশি কাভারেজ পাওয়ার জন্য আর মেকাপের পরে মুখ বেশি উজ্জ্বল আর ফর্সা দেখানর প্রবনতা থাকায় অনেকেই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে ফাউনডেশন ব্যবহার করেন। মনে রাখতে হবে সব ফাউন্ডেশনই হাই কাভারেজ দেয়না। লাইট, মিডিয়াম, হেভি, এই তিন ধরনের ফাউনডেশন থেকে আপনার চাহিদা অনুসারে বেছে নিন ব্যবহারের জন্য। যেকোনো স্পট, অসমান কালো দাগ বা চোখের নিচের কালি ঢাকার জন্য কন্সিলার ব্যবহার করুন।
  • মেকাপের পরে কালো দেখানর আরেকটি কারণ হলো মুখে লাগানোর পর ভালো ভাবে ব্লেন্ড  না করা। ব্রাশ দিয়ে ফাউন্ডেশন লাগানোর পরে বিউটি ব্লেন্ডার বা স্পঞ্জ পানিতে সামান্য ভিজিয়ে সেটি দিয়ে বেইস করুন। এতে করে “কোথাও কম কোথাও বেশি” এমন ভাবটা থাকবেনা। সব জায়গায় সমানভাবে মেকাপ বসে যাবে আর কিছু সময় পরে কেকি ভাবটা ফুটে উঠে কালো দেখাবেনা।
  • পাউডার দিয়ে সেট করুন ফাউন্ডেশন। ব্যবহার করুন ব্রাশ। কারণ মেকাপে, বিশেষ করে বেইস মেকাপে হাতের ব্যবহার মেকাপ কালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাই যতটা সম্ভব ব্রাশ ব্যবহার করুন।
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।