উজ্জ্বল দাগছোপহীন ত্বকের জন্য ওটমিলের পাঁচটি ফেসপ্যাক

ত্বকের জন্য ওটমিলওটমিল নিশ্চয়ই সবাই চেনেন। এর মেদ আর কোলেসটেরল কম করার ক্ষমতার কারণে ওটমিল ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে। কিন্তু ওটমিল যে সুন্দর ত্বকের জন্যও ব্যবহার করা যায় তা কি আপনারা জানেন?

ওটমিল আসলে সব ধরনের ত্বকে ব্যবহারের জন্যই খুব ভালো। কিন্তু স্পেশালি যাদের ত্বকে ব্রণ বা র‍্যাশের সমস্যা আছে, ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত অথবা এতটাই সেনসিটিভ যে ত্বকের সঠিক যত্ন নিতে হিমশিম খেয়ে যান তাদের জন্য ওটমিল সবচেয়ে ভালো কাজ করে। কারণ ওটমিলের সুথিং অ্যাকশন ত্বকের জ্বালাপোড়া (inflammation) কমায়, ত্বকের লালচে ভাব দূর করে আর সাথে সাথে ত্বকের উপরিভাগের অতিরিক্ত তেল শুষে নেয়। এছাড়া অনেকেই হয়ত জানেন না যে ওটমিল ত্বকের ট্যান আর কালচে দাগছোপ দূর করে ত্বক আরও ইভেনটোনড করার ক্ষমতা রাখে। এটা নিয়মিত ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহার করলে আপনার ত্বকের কালচে ভাব দূর হয়ে ত্বক আরও উজ্জ্বল আর স্কিনটোন আরও ফর্সা হতে বাধ্য। এছাড়া যারা মুখ ধুতে খুব ক্ষার যুক্ত সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন না, তারা মুখ ধোয়ার জন্য ওটমিল ব্যবহার করতে পারেন কারণ এটা খুবই ভালোভাবে ত্বকের গভীর পর্যন্ত পরিষ্কার করতে পারে।

আর সেইজন্যই আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম ওটমিল দিয়ে তৈরি কিছু ফেসপ্যাকের রেসিপি যেগুলো আপনারা নিজেরাই ব্যবহার করে দেখতে পারেন ত্বকের জন্য ওটমিল আসলে কতটা কার্যকরী।

কোথায় পাবেন ওটমিল?

আজকাল ওটমিল সবজায়গায় পাওয়া যায়। যেকোনো সুপারশপ বা বড় মুদি দোকানে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওটমিল পেয়ে যাবেন। শুধু খেয়াল রাখবেন অতিরিক্ত উৎসাহে আবার মসলা দেয়া ওটমিলের প্যাক কিনে আনবেন না যেন! ভালোভাবে প্যাকের গায়ের লেখা পরে পিওর ওটমিল কিনবেন।

১ম প্যাকঃ স্কিন হোয়াইটেনিং ওটমিল ফেসপ্যাক
কী কী লাগবে-

২ টেবিল চামচ ওটমিল
৪ টেবিল চামচ সাধারণ দুধ (কাঁচা বা ফুটানো দুটোই ব্যবহার করতে পারেন)
৪ টেবিল চামচ লেবুর রস

যেভাবে করবেন

এই ফেস প্যাকটি তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা সহ সব ধরনের ত্বকের রোদে পোড়া কালো ভাব দূর করার জন্য ব্যবহার করা যাবে। প্রথমে, ওট অল্প একটু পানিতে ফুটিয়ে নিন, তারপর ঠাণ্ডা করুন। আঠালো একটা মিশ্রণ পাবেন। এবার এতে পুরো দুধ আর লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে আপনার মুখ, হাত, পা অথবা শরীরের যেখান থেকে কালো দাগ উঠাতে চান সেখানে ব্যবহার করুন। ২০-২৫ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুব অল্প সময়ে কালচে ভাব ত্বক থেকে চলে যাবে।

২য় প্যাকঃ ওটমিল আর কাঠবাদামের (ALMOND) ফেসপ্যাক
কী কী লাগবে-

২ টেবিল চামচ ওটমিল
কাঠবাদাম (almond) -৫ টা
১ টেবিল চামচ মধু
ফেসপ্যাক মিশানর জন্য যতটুকু দরকার ততটুকু দুধ বা টকদই

যেভাবে করবেন

এই ফেস প্যাকটা নরমাল আর ড্রাই স্কিনের জন্য বেশি ভালো হবে। স্পেশালি ত্বকে যদি বলিরেখা বা মেছতার মত এজিং এর সমস্যা থাকে তবে এটা ব্যবহারে চোখে পড়ার মত ফলাফল পাবেন।

এই প্যাক বানানোর জন্য প্রথমে কাঠবাদাম ব্লেন্ডারে গুঁড়ো করে নিন বা মিহি করে পিষে নিন। এবার ওটমিল মিশিয়ে আবারো ব্লেন্ড করুন বা পিষুন। পুরো বালুর মত দেখতে গুঁড়া পাওয়া গেলে থামুন। চাইলে এই মিশ্রণ একবারে বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন এক সপ্তাহের মত। যখন ফেসপ্যাক বানাতে চাইবেন সাথে শুধু মধু আর দুধ/দই মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ মিনিট পর পানি দিয়ে ত্বক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলুন। রেগুলার বাবহারে ত্বকের বলিরেখা কমে যাবে আর কালো দাগও কমবে।

৩য় প্যাকঃ ওটমিল আর গোলাপজলের স্কিন টাইটেনিং ফেসপ্যাক
কী কী লাগবে-

১ চা চামচ বেসন
১ চা চামচ ওটমিল
১ চা চামচ মধু
পরিমাণমত গোলাপজল

যেভাবে করবেন

ওট মিল একটু পিষে গুঁড়া করে নিন এর সাথে বেসন মেশান। সমান সমান ভাবে দুটা মিশিয়ে শুকনা পাত্রে রেখে দিতে পারেন পরে ব্যবহার করার জন্য। এই গুঁড়া মিশ্রণের মধ্যে মধু আর গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মুখে বিশ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। সব ত্বকের অধিকারীরা এই প্যাক ব্যবহার করতে পারবেন।

৪র্থ প্যাকঃ ওটমিল ক্লিন্সিং মিল্ক
কী কীলাগবে-

১ কাপ ওটমিল
ওট ফোটানর জন্য পরিষ্কার পানি
একটা প্যান আর ছাঁকুনি

যেভাবে করবেন

এটা আসলে কোন ফেসপ্যাক নয়। বরং এই লিকুইড কে ক্লিন্সিং মিল্ক বলা ভালো বলে তাই বলছি। এটা নিয়মিত ব্যবহার করতে পারলে ত্বকের সব ময়লা গভীর থেকে পরিষ্কার হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের কালচে ভাব দূর করে এটা আপনাকে উজ্জ্বল ফর্সা ত্বকও দেবে। সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করতে পারবেন।

কম আঁচে ওট পানিতে ফুটাতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না ওট ঘন হয়ে ওঠে। ঘন হয়ে গেলে চুলা বন্ধ করে দিন। এবার সাবধানে ছাঁকুনি দিয়ে মিশ্রণ থেকে সব লিকুইড আলাদা করে নিন। এবার লিকুইড টা ঠাণ্ডা করুন। এটা খুব ঘন আর একটু আঠালো হবে। ব্যাস, তৈরি হয়ে গেল আপনার ক্লিন্সিং মিল্ক।

এটা ফেস ওয়াশের পরিবর্তে বা মুখ ধোয়ার পরে ব্যবহার করতে পারেন। তুলার বলের সাহায্যে পুরো মুখে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।

৫ম প্যাকঃ ওটমিল আর টমেটোর ফেসপ্যাক
কী কী লাগবে-

২ টেবিল চামচ ওট, পিষে গুঁড়ো করে নেয়া।
অর্ধেকটা টমেটো
২ চা চামচ গোলাপজল

যেভাবে করবেন

টমেটো ভালোভাবে পিউরে করে নিন (টমেটোর পেস্ট)। এবার টমেটো পিউরে আর গোলাপজল ওটের গুঁড়ার সাথে মিশিয়ে পেস্ট বানান। এই পেস্ট মুখে আর গলায় ২০ মিনিট পর্যন্ত লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।

টমেটো আর ওটের মিশ্রণ আপনার ত্বকের ট্যান খুব ভালোভাবে দূর করবে। সাথে সাথে স্কিন এক্সফলিয়েট করে ডেডসেলস দূর করে ত্বক আরও উজ্জ্বল করে তুলবে।
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।