হাঁটাহাঁটি করে ফিট থাকুন সহজেই

রোগহীন শরীর ও প্রাণবন্ত মনের জন্য কোনো না কোনো ধরনের শরীরচর্চা প্রয়োজন। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও ব্যায়ামের ফলে মানুষের শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে। ব্যায়াম এবং সেই সঙ্গে পরিকল্পিত পানাহার হলো দীর্ঘজীবন এবং শরীর-মন তাজা রাখার মূল রহস্য। এর সাথে আদর্শ ওজন বজায় রাখাটাও জরুরি। এ ছাড়া অলসতাকে কাটাতে ব্যায়ামের জুড়ি নেই। এজন্য সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা। এটি কম পরিশ্রমে উপযুক্ত একটি ব্যায়াম, যা সব বয়সের মানুষের জন্য প্রযোজ্য। গবেষকদের মতে, নিয়মিত হাঁটাহাঁটিতে শরীর সুস্থ থাকে ও আয়ু বাড়ে। দীর্ঘ দিন বাঁচতে চাইলে সপ্তাহে কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা হাঁটুন। দেখবেন আপনার আয়ু সাত বছর বেড়ে যেতে পারে। তাছাড়া, হূদযন্ত্র ও রক্তনালির সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটা, জগিং ও দৌড়ানো সমান সুফল আনে। সাত দিনে আড়াই ঘণ্টা করে হাঁটলে সাত বছর আয়ু বেড়ে যায়। মোটা মানুষের ক্ষেত্রেও হাঁটাহাঁটির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। শরীরচর্চা ও হাঁটাহাঁটিকে কখনোই কম গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। স্বল্প পরিমাণে হাঁটাহাঁটিরও একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বস্তুত কারও কারও জন্য হাঁটা এরচেয়েও ভালো ব্যায়াম। কারণ হাঁটলে শরীরের ওপর চাপ পড়ে না। দৌড়ালে অনেক সময় হাড়ের গিঁটে ব্যথা হয়, আহত হয় পেশি। এটা বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

সহজ ও কার্যকরী ব্যায়ামের নাম হাঁটা

সহজ একটি ব্যায়াম হলো হাঁটা। বিশেষ কোনো পোশাক পরার দরকার নেই। ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ ট্রেইনার সুমন ঘোষ বলেন, ‘সপ্তাহে ছয় দিন ৩০ মিনিট জোরে হাঁটাই যথেষ্ট। জগিংয়ের মতো কঠোর ব্যায়াম হার্টকে রক্ত জোরে পাম্প করতে বাধ্য করে। আর এটি উপকারী। তবে পেশি যেহেতু এত কঠোর পরিশ্রম করে, সেজন্য এর প্রয়োজন হয় প্রচুর অক্সিজেন। ব্যায়ামে তৈরি হয় ল্যাকটিক অ্যাসিড। শরীরে ল্যাকটিক অ্যাসিড জমা হওয়ায় পেশি হয় শক্ত ও বেদনার্ত। কিন্তু হাঁটলে তেমন হয় না। হাঁটলে হূিপণ্ড জোরে পাম্প করে, বাড়ায় রক্তপ্রবাহ। তবে পেশির ওপর এত কঠোর প্রভাব ফেলে না। শরীরে তৈরি হয় না ল্যাকটিক অ্যাসিড। তাই শরীরের ওপর কম চাপ প্রয়োগ করেও রক্ত সংবহনতন্ত্রের উজ্জীবনে সাহায্য করে। দেহের সঞ্চিত মেদ অবমুক্ত হয়। তবে হাঁটার ব্যায়ামের পাশাপাশি স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম ইত্যাদি করতে হবে। সেক্ষেত্রে আগে ওয়ার্মআপ করতে হবে ভালো মতো। তারপর স্ট্রেচিং করবেন। পেটের ব্যায়াম করবেন সবার শেষে। কারণ হাঁটা শুধুই কার্ডিও ব্যায়াম। হাঁটার উপকারিতা পেতে স্ট্রেচিং, পেটের ব্যায়াম ইত্যাদি করতে হবে। তাহলেই আপনার শরীর স্লিম ও সুন্দর হবে। একই সাথে সুস্বাস্থ্যও বজায় থাকবে। সে ক্ষেত্রে কোন দিন হাঁটার সাথে কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন তা আগে থেকে রুটিন তৈরি করে নিন।’

হাঁটার উপকারিতা

# শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে এতে ব্রেন ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।

# হাঁটা ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমিয়ে ৬০% উচ্চ রক্তচাপ রোগী ওষুধ ছাড়াই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

# হার্ট ভালো থাকে এবং হার্টে ব্লক হতে পারে না।

# প্রতিদিন ১ ঘণ্টা হাঁটলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলাতে সাহায্য করে ফলে হূদরোগের ঝুঁকির পরিমাণ কমে যায় এবং শরীরে মেদভুঁড়ি হতে দেয় না ।

# যারা নিয়মিত হাঁটেন তাদের মধ্যে ৬৪% লোকের স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে না।

# সকল ধরনের বুকের ব্যথা ও ধড়ফর করা ভালো হয় এবং হার্ট ২০,০০০-৩০,০০০ বার প্রতিদিন স্পন্দন থেকে বিরত থাকে। ফলে হার্টের উপর থেকে অনেক বাড়তি কাজের চাপ হরাস পায়।

# গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটেন তাদের আয়ু বেশি।

# ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে না ও রোগ থাকলে নিয়ন্ত্রণে থাকে।

# হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ও ক্ষুধা বাড়ায়।

# খুব ভালো ঘুম হয়।

চার সপ্তাহে ফিটনেস পেতে নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন:

প্রথম সপ্তাহ
প্রথমে ৫ মিনিট সাধারণ কোনো সহজ এক্সারসাইজ করে ওয়ার্ম-আপ করুন। প্রথমে ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকুন। আস্তে আস্তে গতি বাড়ান। ১ মিনিট দ্রুত হাঁটুন। এর পরের ১ মিনিট আস্তে হাঁটুন। হাঁটার স্পিড কমাতে কমাতে একেবারে থেমে যান।

দ্বিতীয় সপ্তাহ
প্রথমে ৫ মিনিট ওয়ার্মআপ করে নিন। মধ্যমগতিতে হাঁটা শুরু করুন। ৫ মিনিট একই গতিতে হাঁটুন। আস্তে আস্তে গতি কমান। কুল ডাউন এক্সারসাইজ করুন।

তৃতীয় সপ্তাহ
শুরুতে ৫ মিনিট ওয়ার্মআপ করে নিন। মধ্যমগতিতে হাটা শুরু করে আস্তে আস্তে গতি বাড়ান। ২-৩ মিনিট একই গতিতে হাঁটুন। ধীরে ধীরে হাঁটতে থাকুন। ধীরে ধীরে গতি কমাতে কমাতে একেবারে থেমে যান।

চতুর্থ সপ্তাহ
৫ মিনিট ওয়ার্মআপ করে নিন। ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে ক্রমশ গতি বাড়ান। জোরে জোরে ৫ মিনিট হাঁটুন। হাঁটার পর কুল ডাউন এক্সারসাইজ করুন।

তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক