বিয়ের পাত্র/পাত্রী নির্বাচনে যে বিষয়গুলো ভেবে দেখা উচিত

বিয়ে… তা নিজের ইচ্ছাতেই হোক কিংবা পরিবারের, জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়েরই কিছু পছন্দ অপছন্দ থাকেই। আর সাথে পারিবারিক চাহিদাটা তো মাথায় রাখতেই হয়। এই পছন্দ-অপছন্দটা বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক সুস্থতা, চাকরি বা ক্যারিয়ার, পারস্পরিক মিল সবকিছু মিলিয়েই নির্ধারন করা হয়। পাত্র-পাত্রী উভয়েরই এসব ব্যাপার মনে রেখেই একটা সম্পর্কের দিকে এগুনো উচিত। আজ আলোচনা করা হলো সেই সমস্ত ব্যাপার গুলো নিয়ে, যে গুলো কিনা মনে রাখতে পারেন নিজের জন্য পাত্র/ পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে।

সৎ মানুষ হওয়া চাই-

সৎ বলতে আমরা বুঝি নির্লোভ, স্বার্থহীন, ভালো মানুষকে। পাত্র-পাত্রী যেন একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত হয় এটাই অভিভাবকদের প্রথম শর্ত। এখন পরকীয়ায় আসক্তির পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে গেছে বিধায় অভিভাবকদের মধ্যে এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই।তাই ছেলে-মেয়েদের পাশাপাশি তাদের পরিবারও চান মানুষ হিসেবে তারা যেন সৎ হয়।

শিক্ষাগত যোগ্যতা-

পাত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই যেই জিনিসটি দেখা হয় তাহলো ছেলের শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু। ছেলেদের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর হওয়া চাই।

আর মেয়েদের পড়ালেখার ব্যাপারটা আগে অবহেলিত হলেও এখন প্রতিটা সচেতন ছেলেই চায় তাঁদের স্ত্রী অন্তত যেন পড়ালেখায় কমপক্ষে স্নাতক পাশ হয়। একটা শিক্ষিত মেয়ে অবশ্যই পরিবারকে যথেষ্ট পারদর্শিতার সাথে শামলাতে সক্ষম, আর এই ভরসাটা সবাই খোঁজে। আজকাল অভিভাবকদের পছন্দও একইরকমই।

ক্যারিয়ার বা চাকরি-

পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ কন্যা এবং অভিভাবকদের পছন্দ ক্যারিয়ার সচেতন এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পাত্রকে। সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে অবশ্যই পাত্রকে ভালো চাকরি করতে হবে। আর চাকরির ক্ষেত্রে কন্যা এবং অভিভাবকদের পছন্দের তালিকায় আছে- সরকারি কর্মকর্তা, ব্যাংকের চাকরিজিবী, আইনজ্ঞ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পেশার মানুষ।

মেয়েদের ক্ষেত্রে চাকরি করলে ঘর সামলানো যাবেনা এই ধারণা থেকে অনেকাংশে বের হয়ে এসেছে মানুষ কিন্তু তারপরও কিছু কিছু পরিবারে এই সমস্যা এখনো দেখা যায়। তবে এখনকার ছেলেদের বেশিরভাগেরই মেয়েদের চাকরি করা নিয়ে তেমন কোন সমস্যা নেই। আর পেশা হিসেবে পছন্দ- ডাক্তার, শিক্ষিকা, ব্যাংকের চাকরি করে এমন মেয়েদের।

বয়সের পার্থক্য-

পাত্রের বয়সের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা সবসময়ই চান পাত্র যেন তাঁর কন্যার চাইতে অন্তত ৫-৭ বছরের বড় হয়। কারণ অভিভাবকদের মতে এতে বোঝাপড়াটা চমৎকার হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মেয়েদের ভাবনা আবার অন্যরকম। মেয়েদের মতে, বোঝাপড়ার ব্যাপারটা বয়সের উপর নির্ভর করেনা। তাই তারা সমবয়সী থেকে মোটামুটি ২/৩ বছরের পার্থক্য আছে এমন ছেলেই পছন্দ করে বেশি।

অনেকটা পাত্রের ক্ষেত্রে বয়সের ব্যাপারটা যেমন সেরকম মেয়েদের বয়সের ব্যাপারেও অভিভাবকদের মতামতটা এরকম যে, পাত্রীর বয়স যেন কমপক্ষে পাত্রের থেকে ৫-৭ বছরের কম হয়। এখন ছেলেদের পছন্দও অনেকটা একইরকম। সমবয়সীদের তুলনায় বয়সে ছোট মেয়েদের প্রতিই বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেদের আগ্রহ বেশি।

শারীরিক সুস্থতা ও নীরোগ হওয়া-

শারীরিক গড়ন বলতে গায়ের রঙ, লম্বা ও স্বাস্থ্য ভালো এসব ব্যাপার গুরুত্ব পায় বেশি। এক্ষেত্রে ছেলেদের গায়ের রঙ শ্যামলা বা কালো হলেও কোনো সমস্যা নেই কিন্তু উচ্চতার দিকে মেয়ে ও অভিভাবক সবার মত অনেকটা একই, ছেলে লম্বা হতে হবে। খুব বেশি না হোক অন্তত মানানসই বা দেখতে বেঁটে যেন না লাগে এমন ছেলেই পছন্দ সবার।

এখন ছেলেমেয়ে উভয়ই স্বাস্থ্য সচেতন বিধায় ছেলেরা সাধারণত মোটা মেয়ের তুলনায় ছিপছিপে বা পাতলা গড়নের মেয়েই বেশি পছন্দ করেন। আর উচ্চতার ক্ষেত্রে খুব বেশি লম্বা মেয়ে ছেলেদের পছন্দ নয়, এক্ষেত্রে মিডিয়াম বা খাটো উচ্চতার হলেও সমস্যা নেই।

কিন্তু উভয়পক্ষেই যেই ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ন তা হলো পাত্রপাত্রী দুজনকেই শারীরিকভাবে সুস্থ্ ও নীরোগ হতে হবে নাহলে এর পরবর্তীতে এর প্রভাব সাংসারিক জীবনেও পড়তে পারে।

রুচিশীলতা ও ভদ্রতা-

একজন মানুষের কথাবার্তা, চালচলনেই তাঁর ভদ্রতা ও রুচিশীলতা প্রকাশ পায়। তাই ছেলে মেয়ে উভয়কেই হতে হবে এই ব্যাপারে যথেষ্ট মার্জিত। এমন কোন কাজ বা কথা বলা যাবেনা যা তাঁদের রুচিবোধ বা ভদ্রতার পরিপন্থী হয়।

উদারতা ও সামাজিকতা-

এখনকার মেয়েরা স্বাধীনচেতা, তাই তারা চায় পড়ালেখার পর চাকরি করতে। এক্ষেত্রে মেয়েরা চায় তাঁদের স্বামী বা তাঁর পরিবার যেন বাধ না সাধে। অফিসে চাকরি করা বা অফিসের কাজে একটু বেশি সময় বাইরে থাকা নিয়ে যেনো ছেলেটি কোনো খারাপ মন্তব্য না করে বা সংসারে যেনো অশান্তি না হয়। তাই অবশ্যই এসব ব্যাপারে ছেলেটিকে হতে হবে খোলা মনের।

একটি মেয়েকেও হতে হবে যথেষ্ট ভদ্র ও চিন্তাভাবনায় উদার। স্বামী অফিসে কাজ করার সময় অনেক মানুষের সাথে মিশতে হতে পারে, অনেক সময় অফিসে বেশি টাইম দিতে হতে পারে এসব নিয়ে মেয়েটির কখনও অবুঝের মতো আচরণ করা উচিত নয়। এ ধরণের ব্যাপারগুলো অবশ্যই একটি মেয়েকে বুঝতে হবে ও সামাজিক হতে হবে।

ইগো সমস্যা না থাকা-

একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বিয়ে নামক সামাজিক একটা বন্ধনে সারাজীবনের জন্য আবদ্ধ হয়। তাঁদের সম্পর্কটা অবিচ্ছেদ্য। তাই এই সারাজীবনের সম্পর্কটায় ইগো আসতে দেয়া যাবে না কখনোই। ছেলে ও মেয়ের কোন একজনের যদি এই সমস্যাটা থাকে তাহলে তাঁর জন্য ভুগতে হতে পারে তাঁর সঙ্গীসহ পরিবারের অন্য সদস্যদেরও।

রসবোধ থাকা-

বেশিরভাগ দম্পতির মধ্যে যেই সমস্যাটা পরিলক্ষিত হয় তা হলো কোন একজনের রসবোধ না থাকা বা বোরিং হওয়া। মেয়েটি হয়তো খুব উচ্ছল প্রকৃতির অথচ ছেলেটি খুব শান্ত স্বভাবের বা গম্ভীর প্রকৃতির। আবার অনেক ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে, ছেলেটি খুব ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে কিন্তু মেয়েটি একদম ঘরকোনা। এরকম হলেও সমস্যা, তাই দীর্ঘ মেয়াদি সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য রসবোধ থাকাটা খুব জরুরি।

মতামত ও আদর্শের মিল-

যে কোন সম্পর্কেই মতামত বা আদর্শের মিল না থাকলে একসময় না একসময় বিরোধ হবেই। আর যখন তা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্কের মধ্যে চলে আসে সেক্ষেত্রে এটা আরও প্রকট হয়ে দেখা দেয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যুক্তি-তর্ক বা কোন কোন ব্যাপারে মতানৈক্য হতেই পারে কিন্তু তাঁদের দুজনের মতামত আর আদর্শের অমিল হওয়া যাবেনা, তাই পাত্র-পাত্রী নির্বাচনে অবশ্যই এই ব্যাপারটি প্রাধান্য পাবে বেশি। এজন্য পারিবারিকভাবে হোক বা নিজের পছন্দে যেভাবেই হোক না কেনো পারস্পরিক মিলটা দুজনের মধ্যে কেমন ও কতটুকু এটা বোঝার জন্য নিজেদেরকে বিয়ের আগেই একটু সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করা উচিত।