ওজন কমাতে ব্যয় করুন মাত্র সাত দিন

একটু অসচেতনতা বা সময়ের অভাবে শরীরের ওজনের দিকে নজর না রাখতে পারায় অনেকেই মুটিয়ে যান। কিন্তু দেহের বাড়তি ওজন কারো কছে সাধারন বিষয় হলেও স্বাস্থ্য সচেতনদের কাছে এটি একটি অত্যান্ত চিন্তার বিষয়। সামান্য ওজনেও তারা অস্থির হয়ে যান। আর তখন সেই দু এক কেজি ওজন কমাতে মাঝে মাঝেই ভুল ডায়েট করে থাকেন যা তাকে হয় আরো মোটা করে না হয় তাকে অসুস্থ করে তোলে। তাই এসব স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য রয়েছে সঠিক পদ্ধতির ডায়েট প্লান আর তাও মাত্র ৭ দিনের। চলুন জেনে নেই ডায়েট প্লানটি-

প্রথম দিন:
প্রথম দিনই হচ্ছে আপনার ডায়েট প্ল্যানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রথম দিন হচ্ছে শুধুই ফল খাবার দিন। সারাদিনে যেকোনো সময়ে যত খুশি তত ফল খান। তবে একটি ফল বাদে, আর সেটি হচ্ছে কলা। কলা বাদে যেকোনো ফলই আপনি খেতে পারবেন প্রথম দিন। এতে করে পেট অনেকক্ষণ পর্যন্ত ভরা থাকবে। আর কমপক্ষে ৮-১২ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করবেন। তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন, আপনি যদি সত্যিই এই প্ল্যানটি কার্যকর করতে চান তবে ফল ছাড়া অন্য কোন কিছুই খাবেন না এবং খেয়াল রাখবেন যাতে পেট কখনোই খালি না থাকে। যখনই ক্ষুধা ভাব আসবে তখনই ফল খাবেন এবং অবশ্যই পানি পান করতে ভুলবেন না।

দ্বিতীয় দিন:
১ম দিন যেমন শুধুই ফলমূল খেয়েছেন, তেমন করেই ২য় দিন শুধুই শাক সবজি খাবেন। কাঁচা বা রেঁধে যেকোন ভাবেই খেতে পারেন আপনার পছন্দের সবজি। তবে রাঁধার সময় অবশ্যই তেল ব্যবহার করবেন না। সবজিতে তেল ব্যবহার করলে ওজন কমানোর উদ্দেশ্যটাই বিফলে যাবে। তাই তেল ব্যবহার না করে আধা সেদ্ধ করে বা নিজের পছন্দ অনুযায়ী রেঁধে খান। সবজির মধ্যে খেতে পারেন গাজর, ব্রকলি, বাঁধাকপি, শশা, লেটুস, শিম ইত্যাদি। তবে যদি আপনার খাবারের তালিকায় আলু রাখতে চান তবে দিনের অন্য কোন সময়ে না খেয়ে সকাল বেলাতেই খান। কারণ সকাল বেলায় সেদ্ধ আলু খেলে আলুতে যে পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট রয়েছে তা সারাদিনের বিভিন্ন কাজে বার্ন হয়ে যাবে এবং ফ্যাটও জমবে না। সারাদিনে আপনার ইচ্ছেমত সবজি খেয়ে নিন আর অবশ্যই ৮-১২ গ্লাস পানি পান করতে ভুলবেন না। আর সারাদিন এত শাক সবজি খাওয়ার জন্যে অন্যান্য দিনের চাইতে এই দিনে টয়লেটে বেশি যাওয়া লাগতে পারে। তবে এর ফলে ডাইজেস্টিভ সিস্টেম পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তৃতীয় দিন:
ডায়েট প্ল্যানের ৩য় দিন হচ্ছে সবজি এবং ফল খাওয়ার দিন। এই দিন আপনি যেকোনো সবজি ও ফল ইচ্ছেমত পেট ভরে খেতে পারবেন। তবে এই দিনের খাবারের তালিকা থেকে কলা এবং আলু বাদ দিবেন। যেকোনো সময় খিদে লাগলেই ফল বা সবজি খেয়ে নিন, আর সারাদিনে ৮-১২ গ্লাস পানি অবশ্যই পান করবেন।

চতুর্থ দিন:
এই দিন শুধু কলা আর দুধই হবে সারা দিনের খাবার। কলা এবং দুধ ছাড়া আর কোন কিছুই খাওয়া যাবে না। তবে এই দিন ব্যতিক্রম হচ্ছে আপনি নিজের ইচ্ছেমত খেতে পারবেন না। সারাদিনে ৮-১০ টি কলা এবং ৩ গ্লাস দুধের বেশি খাওয়া যাবে না। অনেকেই হয়তো চিন্তা করছেন যে এই দিন হয়তো খিদে লাগতে পারে। সেই ধারনা ভুল, দিনের শেষে আপনি নিজেই লক্ষ্য করবেন যে এই খাবারেই বেশ কেটে গেছে সারাদিন। তবে তার জন্যে এই সীমিত কলা এবং দুধ ঠিকমতো ভাগ করে নিতে হবে যে দিনের কোন সময়ে কতটুকু করে খাবেন। সকালের খাবারে একটি কলা এবং এক গ্লাস দুধ রাখুন এবং দুপুরের আগে বা সকাল ১১-১২ টার দিকে আরো দুটি কলা খেতে পারেন। দুপুরে এক গ্লাস দুধ এবং ২ টি কলা খান। আর বিকেল বেলা নাস্তায় প্রয়োজন অনুযায়ী ২-৩ টি কলা খেতে পারবেন। আর রাতের বেলা বাকি এক গ্লাস দুধ এবং দুটি কলা খেয়ে নিন। এই নিয়ম অনুযায়ী দুধ এবং কলা ভাগ করে নিলে সারাদিনে একদমই ক্ষুধা অনুভব করবেন না।

পঞ্চম দিন:
এই দিনের ডায়েটে প্রথমবারের মত দুপুরে ভাত খেতে পারবেন। তবে শুধুই ভাত এবং তা এক কাপের বেশি নয়। আর সারাদিনে ৬-৭ টি বড় সাইজের টমেটো খেয়েই পার করে দিতে হবে এই ডায়েটের ৫ম দিন। তবে এই দিন শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বেশ সম্ভাবনা রয়েছে, তাই অবশ্যই কমপক্ষে ১২-১৫ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

ষষ্ঠ দিন:
ডায়েটের এই ৬ষ্ঠ দিনে আবারো সেই ভেজিটেবল ডায়েট করতে হবে। সারাদিনে যত খুশি সবজি খেতে পারবেন, তবে তেল দিয়ে রান্না করবেন না। আর দুপুরে সবজির সাথে এক কাপ ভাতও খেতে পারবেন। দিনে অবশ্যই ৮-১২ গ্লাস পানি পান করতে ভুলবেন না যেন।

সপ্তম দিন:
ডায়েট প্ল্যানের এই শেষ দিনে সারাদিন যেকোন সবজি এবং দুপুরে এক কাপ ভাত আপনি খেতে পারবেন। তবে এইদিনে বোনাস হচ্ছে এর সাথে আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ফলের জুসও খেতে পারবেন। বিশেষ করে জাম্বুরা, তরমুজ, কমলা এসব ফলের জুস বেশি করে খাবেন।

৭ দিন শেষে আপনার শরীরের ওজন অন্তত ৪-৫ কেজি তো কমবেই, সাথে সাথে শাক সবজি, ফলমূল এসব পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার জন্য চেহারায়ও উজ্জ্বলতা আসবে। বিশেষ করে সামনে যাদের কোন অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্লান আছে এবং অনুষ্ঠানে নিজেকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে চান তাদের জন্য এটি খুবই কার্যকর। আর এই ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করার মাধ্যমে আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমও ইম্প্রুভ করবে। তবে একটি কথা মাথায় রাখবেন, একটানা ৭ দিনের বেশি এই ডায়েট অনুসরণ করবেন না, দরকার হলে ১৫ বা ২০ দিনের গ্যাপ দিয়ে আবার শুরু করতে পারেন।

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।