সুখী জীবন যাপনের ১০ উপায়

সুখী জীবন যাপনের ১০ উপায়
সুখ নামক অচিন পাখিটাকে সবাই পোষ মানাতে চায়। কিন্তু পাখি তো সবার কাছে পোষ মানে না। এটা পাখির দোষ নয়। পোষ মানাতে জানতে হয়। সুখপাখিকে পোষ মানানোর রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু উপায়। ভাবছেন না জানি কতো কষ্ট করতে হবে। কষ্ট না হলে তো আর কেষ্ট মিলবে না। তবে এই কষ্টের ধরণটা ভিন্নরকম। কেবল দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েই সুখ নামক নৌকার স্থায়ী সদস্য হয়ে যেতে পারেন আপনি।

তো চলুন জেনে নেই সুখী জীবন যাপন করার ১০ উপায়।

একাকীত্বঃ
একাকীত্ব সবসময় ক্ষতিকর নয়। সত্যি বলতে কী জীবনে একাকীত্বেরর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু নিঃসঙ্গতা অনেকেই ভয় পাই আমরা। ফলে সঙ্গও উপভোগ্য হয় না। কিছুটা সময় নিজের সাথে কাটালে আপনি বুঝতে পারবেন একাকীত্বের শক্তি কতোখানি। নিজেকে জানতে হলে নিজের ভিতর ডুব দিতে হবে, তুলে আনতে হবে অজস্র মণি-মুক্তা। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর সময় আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে অন্যের থেকে এমনকি নিজের থেকেও। এটা সুখী জীবনের জন্য বয়ে আনছে অভিশাপ। প্রতিদিন নিয়ম করে কিছুটা সময় একলা কাটান। একটা অভ্যাসে পরিণত করুন। সময় ও স্থান এক হলে ভালো হয়।

শরীরের যত্নঃ
‘মিথ্যা শুনি নি ভাই, এ হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির- কা’বা নাই।’ কী কথাটা পরিচিত লাগছে? কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন হৃদয়ের মাহাত্ম্য বোঝাতে গিয়ে। আমরা হৃদয়ের অস্তিত্ব জানি না, কিন্তু শরীরের অস্তিত্ব তো জানি। আসলে হৃদয় বা মন হলো মস্তিষ্কজাত কিছু ক্রিয়ার ফসল। তো শরীর ভালো না থাকলে এই মন্দির বা কা’বাকেও ভালো রাখা সম্ভব হবে না। শরীর হলো প্রকৃতির আশীর্বাদ। একে বাদ দিয়ে কখনোই সুখের অনুভব সম্ভব নয়। তাই শরীর সুস্থ রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। সঠিক খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত ব্যায়াম করলেই একটি সুস্থ ও সুন্দর শরীর পাওয়া সম্ভব। আর সুন্দর মনও তখন তৈরি হয়ে যাবে আপনাতেই।

পুষ্টিঃ
শরীর ও মনের পুষ্টির জন্য সুনির্দিষ্ট কাজগুলো করা উচিত। শরীরের জন্য সুষম খাবার আর মনের জন্য ভালো লাগার কাজগুলোকে প্রাধাণ্য দেয়া উচিত। পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন কেবল সচেতনতার। শাকসবজি, পানি, ফলমূল রাখুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। আর প্রতিদিন চেষ্টা করুন ভালো লাগা কোনো কাজে সময় দিতে।

বই পড়ুনঃ
বইয়ের চেয়ে ভালো কোনো সঙ্গী হতে পারে না। প্রতিদিন নিয়ম করে কমপক্ষে ৩০ মিনিট বই পড়ুন। পরিবর্তনটা বুঝতে বেশি দেরি হবে না। তবে অনলাইনে পড়ার চেয়ে বই পড়া অনেক উপকারী। বই পড়ার সময় অনুভব করার চেষ্টা করুন। মানসম্পন্ন লেখা পড়ুন নতুবা মনের বাগানে ফুল ফুটবে না। আমরা প্রায়ই আমাদের পছন্দসই বই পড়তে চাই। কিন্তু ভেবে দেখতে হবে সেই পছন্দের বইটি কতোটুকু প্রয়োজন পূরণ করছে।

নিরহংকারী হোনঃ
‘অহংকার পতনের মূল’, সবাই জানি। কিন্তু কাজেকর্মে মানি কয়জন? কখনোই অহংকার করবেন না। লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগোন।অর্জিত হয়ে গেলে গর্ব করতে পারেন, অহংকার নয়। হয় আপনি সময়কে ব্যবহার করবেন নাহয় সময় আপনাকে। অংহকারীদের কাছে কেবল অসুখই আসে, সুখ নয়।

সকালে উঠুনঃ
সেই ছড়াটা মনে আছে তো?

‘তাড়াতাড়ি বিছানা
আগে ওঠা
একজন মানুষ করে তোলে
সুস্থ, weathy এবং জিনিস।’

ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখুন কেমন ফুরফুরে লাগছে শরীর মন দু’টোই। এতে আপনি অনেক সময়ও পাবেন। কাজগুলো ঠিকমতো করতে পারবেন। আর দিনশেষে সন্তুষ্টির সাথে ঘুমোতে যেতে পারবেন। আমাদের মস্তিষ্ক কাজ করে দিনে আর বিশ্রাম নেয় রাতে। এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। আপনি যদি এই নিয়মের বাইরে চলতে চান তো শরীর বিদ্রোহ করবেই। ফলাফল হিসেবে সুখ পালাবে আপনার জীবন থেকে। সুতরাং তাড়াতাড়ি ঘুমোতে যাওয়া আর তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার রুটিন বানিয়ে ফেলুন।

সঙ্গীতঃ
সঙ্গীত হলো মাইন্ড রিল্যাক্সিং ওষুধ। যখন বিষণ্ণ লাগে তখন গান শুনুন।কারণ, এর আছে হিলিং পাওয়ার যা আপনার মনের ব্যথা সারিয়ে দেবে জলদি। প্রিয় গান শুনতে শুনতে আনন্দে ভেজাতে পারেন চোখও।

ইতিবাচক শব্দঃ
শব্দের ক্ষমতা কতো সেটা বলা নিষ্প্রয়োজন। ইতিবাচক শব্দ দিয়ে ভরে ফেলুন নিজের ডায়েরি। নেতিবাচক শব্দগুলোকে ‘না’ বলুন,দেখুন সুখ কতো তাড়াতাড়ি চলে আসে আপনার জীবনে। সংস্কৃতিতে ‘মান’ হলো মন আর ‘ন্ত্র’ হলো উচ্চারণ। মন্ত্র হলো আপনার উচ্চারিত কিছু শব্দ যা ইতিবাচকতার দিকে নিয়ে যায়। মানুষের মন কাজ করে বিস্ময়করভাবে। কর্মগুলো চিন্তা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই ইতিবাচক চিন্তাগুলো ইতিবাচক ফল বয়ে আনে।

চারিত্রিক সামঞ্জস্যঃ
বড় হতে গিয়ে আমরা কেউ কেউ নিজের চাওয়াকে হারিয়ে ফেলি। এটি ঘটে বাইরের হস্তক্ষেপ আর অন্যের চাপিয়ে দেওয়া ইচ্ছার ফলে। কিন্তু নিজে কী করতে চাই সেটা জেনে সে অনুযায়ী আগানো উচিত। ভোলা অনুচিত যে অন্যের দ্বারা উৎসাহিত হওয়া ভালো কিন্তু দিনশেষে মানুষ একাই। ব্রুস লি বলেছেন, ‘সর্বদা নিজের মতো থাকো, নিজেকে প্রকাশ করো, আত্মবিশ্বাসী হও। কখনো সফল ব্যক্তিত্বের অনুকরণ করবে না।’

সরলতাঃ
এটি জীবনের জন্য কতোখানি দরকার তা জীবনের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। ব্যস্ত থাকা সহজ। কিন্তু সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত থাকা এতো সহজ নয়। তাড়াহুড়ো পরিহার করে লক্ষ্য অর্জনে একাগ্র হওয়া উচিত। সেই লক্ষ্য যা জীবনকে অর্থবহ করে তুলবে। অহেতুক জটিলতা বাড়ানোর কী প্রয়োজন! সরল থেকে জীবনকে যাপন করে দেখুন কতো আনন্দ অনুভূত হয়।

জীবন একটাই। আর কখনো একে পাওয়া যাবে না। তাই যে জীবন যাপন করতে চাইছেন তা সুচিন্তিতভাবে আর সুন্দরভাবে যাপন করুন। সুখপাখি ধরা দেবেই।

সূত্রঃ bdmotivator

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।