ত্বক বুঝে মেকআপ

মেকআপ করার জন্য উপযুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার না করলে পুরো চেষ্টাটাই নষ্ট হয়ে যায়। বেশি মেকআপ করলে উগ্র মনে হয়, আবার অল্প মেকআপ করলেও ত্বক অনুজ্জ্বল রয়ে যায়। তাই নিজের ত্বকের গড়ন, গায়ের রং, মুখের গঠন এবং পরিবেশ অনুযায়ী মেকআপ করা অনেক বেশি জরুরি। ত্বকের রং ও চেহারার সঙ্গে মানানসই সাজসজ্জা না হলে আপনার পুরো ব্যক্তিত্বটাই মাটি হয়ে যেতে পারে। তাই মেকআপ করার ক্ষেত্রে চাই একটু সচেতনতা। নিজেকে আকর্ষণীয় এবং ব্যক্তিত্বে অনন্য হিসেবে উপস্থাপন করতে হলে বেছে নিন আপনার নিজস্ব স্টাইল। ত্বক বুঝে মেকআপ করার পরামর্শ নিয়ে এবারের আয়োজন। লিখেছেন নওশীন শর্মিলী
আমরা প্রায়ই মেকআপ করাকে একটি সহজ বিষয় হিসেবে ভেবে থাকি। এর কারণ হয়তো মেকআপ করাটা অনেকেই কোনোরকমে ঘষামাজার আওতায় ফেলে দিয়েছেন। কিন্তু আসলে কি তাই? সৌন্দর্য উপস্থাপনের অনেকখানি নির্ভর করে মেকআপের উপর। মেকআপের হেরফের হলে তার বাজে প্রভাব সৌন্দর্যের উপর পড়ে। তাই এজন্য চাই কিছু সচেতনতা। কেননা সবার ত্বকের গড়ন এবং গায়ের রং যে একেই রকম হবে তেমনটি কিন্তু নয়। যেমন যাদের গায়ের রং ফর্সা তাদের অবশ্যই হালকা মেকআপ করা উচিত। কারণ অতিরিক্ত মেকআপ ব্যবহারে ফর্সা ত্বক ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, যা ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতাকে নষ্ট করে দেয়। তা ছাড়া দিনের বেলায় ফর্সা ত্বকে ক্রিমবেইস মেকআপ করা যেতে পারে। তবে রাতের পার্টিতে একটু গাঢ় রঙের মেকআপ ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগবে। গায়ের রং যাদের শ্যামলা তারা চাইলে সব ধরনের মেকআপ ব্যবহার করতে পারেন। পাশাপাশি যাদের গায়ের রং কালো তারা দিনে অথবা রাতে যেকোনো সময় গাঢ় রঙের মেকআপ মুখে লাগাতে পারেন। কারণ গাঢ় রঙের মেকআপ চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে। তা ছাড়া ত্বকের সুস্থতার কথা মাথায় রেখে ভালো মানের ফেস পাউডার বা ফেস মেকআপ ব্যবহার করা উচিত। ফর্সা ত্বকে উজ্জ্বল রঙের আইশ্যাডো অনেক বেশি মানানসই। এ ক্ষেত্রে গোলাপি, হালকা আকাশি রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করা যেতে পারে। দিনের বেলায় যেকোনো পার্টি সাজে উজ্জ্বল রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করাই উত্তম। তবে রাতের পার্টিতে গাঢ় রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। বেগুনি, ব্ল্যাক, নীল, হ্যাজেল, গ্রিন, কোরাল বা যেকোনো গাঢ় রঙের আইশ্যাডো রাতের পার্টিতে অনেক বেশি মানানসই। শ্যামলা ত্বকে উজ্জ্বল বা গাঢ় যেকোনো রঙের আইশ্যাডো ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ শ্যামলা ত্বকে যেকোনো রঙের আইশ্যাডো সহজেই মানিয়ে যায়। যাদের গায়ের রং কালো তারা দিনের অথবা রাতের পার্টির সাজে অবশ্যই ব্রাউন, ভায়োলেট, কোরাল, সফট পিটের মতো ব্রাইট কিন্তু কুল শেড—এ ধরনের আইশ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন।

মেকআপ করার আগে

l মেকআপ করার ক্ষেত্রে মেকআপ সামগ্রী বাছাই করতে সচেতন হোন। নিজের ত্বকের ধরন অনুসারে মেকআপের প্রয়োজনীয় প্রসাধনী ব্যবহার করুন। মেকআপ বাছাই করার আগে নিজের ত্বকের ধরন সম্পর্কে জেনে নিন।

l যাদের গায়ের রং ফর্সা তারা প্যাস্টেল শেডস বেছে নিন। আই মেকআপের জন্যে ব্লু বা ল্যাভেন্ডার শ্যাডো মানানসই হবে। পিঙ্ক, বেজ বা পিচের নানা শেডের ব্লাশ এবং লিপস্টিক ফেয়ার কমপ্লিকশনের জন্য আইডিয়াল হবে। মাশকারার রং হওয়া চাই কালো বা ব্রাউন।

l যারা শ্যামবর্ণ, তারা ফাউন্ডেশন বাছাই করার সময় যতটা সম্ভব নিজের স্বাভাবিক গায়ের রঙের কাছাকাছি শেড পছন্দ করুন। কম্প্যাক্টের বদলে বেবি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। কোরাল, রোজ, ডিপ অরেঞ্জ ডার্ক স্কিন টোনকে কমপ্লিমেন্ট করে। রাতের পার্টির জন্য আদর্শ ব্রোঞ্জ, প্লাম বা ওয়াইন আই শ্যাডো ব্যবহার করতে পারলে পারফেকশন আসবে।

l গমরঙা ত্বকে একটু হলুদঘেঁষা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন। আই শ্যাডো হবে ওয়ার্ম ব্রাউন, কপার বা পার্পল। রাতের জন্য আইডিয়াল ব্রোঞ্জ বা গোল্ডেন লিকুইড ব্লাশ ব্যবহার করুন।

ফাউন্ডেশন

ফাউন্ডেশন ব্যবহারে সচেতন হোন। মার্কেটে বিভিন্ন কসমেটিকসের দোকানে এসব রূপসজ্জার উপকরণ পাওয়া যায়। তবে জেনেশুনে বিশ্বস্ত দোকান থেকে এসব উপকরণ কিনুন। বিশেষ কিছু বিষয়ে নজর দিন। এতে আপনার ত্বকের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যাবে। বোতলে ফাউন্ডেশনের রং সামান্য বেশি গাঢ় দেখায়। তাই কেনার সময় খেয়াল রাখবেন আপনার ত্বকের সঙ্গে যেন ফাউন্ডেশনের রং মানানসই হয়। পছন্দসই ফাউন্ডেশন ট্রাই করুন আপনার ত্বকের ওপর। ফাউন্ডেশনের রং ঠিকমতো বুঝতে পারবেন। ঘাড়ের চেয়ে মুখের ত্বকের রং হালকা হয়। তাই হালকা ও গাঢ় দু রকম টোনের ফাউন্ডেশন বেছে নিন। হালকা রং ত্বক উজ্জ্বল করবে। গাঢ় রং শেডিংয়ের জন্যে দরকার। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য বেছে নিন অয়েল ফ্রি লিকুইড ফাউন্ডেশন। ব্যবহার করতে পারেন মেকআপ বেস ফাউন্ডেশন পাউডার। এটি মুখের অতিরিক্ত চকচকে ভাব দূর করবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য আদর্শ ক্রিমের মতো ঘন ফাউন্ডেশন। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখবে। অনুজ্জ্বল, হালকা ভাঁজ পড়েছে এ রকম ত্বকের জন্যও বেছে নিন ময়েশ্চারাইজার-সমৃদ্ধ ফাউন্ডেশন। দাগছোপহীন, সমস্যামুক্ত ত্বকের জন্য লাইট টাচ লিক্যুইড ফাউন্ডেশন। বলিরেখাযুক্ত ত্বকে পেপটাইডস, ভিটামিন সমেত হাইড্রেটিং ক্রিম বা লাইট-ওয়েট লিক্যুইড ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশন লাগানোর পর ফেস ব্রাশ দিয়ে হালকা পাউডার লাগাবেন মুখে। বিশেষ করে চোখ ও নাকের পাশ দিয়ে।

লিপস্টিক

উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক ফর্সা ত্বকের জন্য প্রযোজ্য। কারণ গাঢ় রঙের লিপস্টিক দিনের বেলায় অনেক বেশি চোখে লাগে। তাই দিনের যেকোনো পার্টিতে ফর্সা ত্বকে হালকা গোলাপি বা সফট রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা উচিত। তবে রাতের পার্টিতে গাঢ় রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে লাল, গাঢ় গোলাপি রঙের লিপস্টিক ঠোঁটে লাগাতে পারেন। শ্যামলা ত্বকে ব্রাউন, গোলাপি, লাল, মেরুনসহ সব ধরনের লিপস্টিক মানানসই। পাশাপাশি কালো রঙের ত্বকে আমরা দিনের যেকোনো পার্টিতে উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারি। তবে রাতের পার্টিতে লাল, মেরুনসহ গাঢ় রঙের যেকোনো লিপস্টিক ব্যবহার করাই উত্তম।

ব্লাশঅন

ব্লাশঅন ত্বকের সঙ্গে মিলিয়ে ব্যবহার করা অনেক বেশি জরুরি। তাই ফর্সা ত্বকে হালকা গোলাপি আভা কিংবা একটু ম্যাট রঙের ব্লাশঅন ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার যাদের গায়ের রং শ্যামলা বর্ণের তারা সব ব্যবহার করতে পারেন। কালো ত্বকে একটু উজ্জ্বল আভাসম্পন্ন ব্লাশঅন ব্যবহার করা উত্তম। এতে গায়ের রং উজ্জ্বল দেখাবে।

আইলাইনার, মাশকারা, কাজল

চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে আইলানার, মাশকারা বা কাজল অবশ্যই ব্যবহার করতে হয়। তাই রঙের দিকে খেয়াল রেখেই নির্বাচন করতে হবে ত্বকের সঙ্গে মানানসই আইলাইনার, মাশকারা বা কাজল। কালো ও নীল রঙের আইলাইনার, মাশকারা, কাজল ফর্সা ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। শ্যামলা ও কালো রঙের ত্বকে কালো রঙের আইলাইনার, কাজল, মাশকারা অনেক বেশি মানানসই।

নেলপলিশ

সব ধরনের নেলপলিশ ফর্সা ত্বকে ব্যবহার করা যায়। তবে শ্যামলা ত্বকে মেরুন বা গাঢ় নেলপলিশ ব্যবহার করলে হাত-পা খুব বেশি উজ্জ্বল লাগে।

লক্ষ রাখুন

l ত্বককে সুস্থ রাখতে চাইলে ভালো ব্র্যান্ডের পণ্য ব্যবহার করুন।

l পণ্য কেনার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে কিনুন।

l পণ্যে কী কী উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে তা দেখে কিনুন।

l ফেস পাউডার, ব্লাশঅন বা আইশ্যাডো ব্যবহারের আগে রাতে কানের নিচে বা হাতে লাগিয়ে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাচাই করে মুখে ব্যবহার করুন।

ঘরে বসেই সহজ মেকআপ

মেকআপের কিছু প্রাথমিক নিয়ম জানা থাকলে ঘরে বসেই মেকআপ করতে পারেন আপনিও। এজন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলো প্যানস্টিক, ডাস্ট পাউডার, প্যানকেক, পাফ ও ফোম, ব্লাশন, কয়েক রকম আইশ্যাডো, মাশকারা, লিপস্টিক ও গ্লস; চোখের, গালের ও ঠোঁটের বিভিন্ন রকম ব্রাশ। প্যানকেক ও ডাস্ট পাউডার ত্বকের রং অনুযায়ী বাছাই করবেন। ফর্সারা গোলাপি, শ্যামলারা বাদামি আর কালোরা গাঢ় রং বেছে নেবেন।

মেকআপের আগে চাই ত্বকের যত্ন। ত্বক শুষ্ক হলে মুখ ধুয়ে হালকা করে তরল ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নেবেন। ত্বক তৈলাক্ত বা মিশ্র হলে টোনার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুলেই চলবে। অতিরিক্ত তৈলাক্ত হলে বরফ বেঁধে মুখে ঘষে নেবেন।

মেকআপের আগে প্রথমে আঙুলের ডগায় প্যানস্টিক নিয়ে মুখের কালো দাগ ঢেকে দিতে হবে। এরপর পাফের সাহায্যে পুরো মুখে ডাস্ট পাউডার লাগাতে হবে ও পানি স্প্রে করতে হবে হালকাভাবে। আঙুলের সাহায্যে চেপে পাউডার মুখে বসিয়ে নিতে হবে। পাউডার বসে গেলে ভেজা ফোমের সাহায্যে প্যানকেক লাগিয়ে নিন। প্রথমে টি জোন, অর্থাত্ কপাল, নাক ও চিবুকে লাগাতে হবে। তারপর আঙুলের সাহায্যে মুখের অন্যান্য অংশে পুরোপুরি মেশাতে হবে। হাতেও প্যানকেক লাগাতে হবে, যাতে ত্বকের রঙে বৈসাদৃশ্য দেখা না যায়। হালকা ফেসপাউডার বুলিয়ে গালের ভাঁজে ব্লাশঅনের পরশ দিন। তৈরি হয়ে গেল মেকআপের বেজ।

মেকআপের কিছু ভুলভ্রান্তি কাটতে

l শরীরের রং অনুযায়ী সাবধানে ফাউন্ডেশন বেছে নিন। ভুল করে শেডের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে শুধু যে মেকআপ অস্বাভাবিক লাগে তাই নয়, আপনার মুখের অন্য কোনো দাগ থাকলে তা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। ফাউন্ডেশনের শেড বাছাই করার সময় অল্প একটু নিজের গালে আর চোয়ালের কাছে লাগিয়ে প্রাকৃতিক আলোয় দেখে নিন, কেমন লাগছে।

ফাউন্ডেশন ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব ঘন বা মোটা ধরনের ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না। বেছে নিন আপনার ত্বকের প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই কোনো হালকা লিক্যুইড ফাউন্ডেশন। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পর সেটা মেকআপ স্পঞ্জ দিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন।

l আপনার মুখের ব্রন, দাগ বা ডার্ক সার্কল ঢাকার জন্য একগাদা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না। ওই কাজটা কনসিলার দিয়ে করা উচিত।

l ত্বকে ফাউন্ডেশন লাগানোর পর খুব ভালো করে ব্লেন্ড করতে ভুলবেন না। আর শুধু ফাউন্ডেশনই নয়, আই শ্যাডোর সঙ্গে আই লাইনার, লিপ লাইনারের সঙ্গে লিপস্টিক যেন ভালোভাবে মিশে যায়।

l ময়েশ্চারাইজার বা ক্রিমের আগে ফেসপাউডার বা ফাউন্ডেশন লাগাবেন না।

সুত্রঃ ittefaq

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।