চুলের যত্নে প্রসাধন

চুলের সুরক্ষা চাইলে সব সময় ভালো ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। লেবেল পড়ে ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখেই উপযোগী প্রসাধনী কেনা উচিত। খেয়াল রাখুন কিছু বিষয়ে-

চুল বাঙালি নারীর সৌন্দর্যের আসল পরিচয়। ঘন কালো লম্বা চুল ও আগা গোড়া সমান চুল সকলের পছন্দ। সুন্দর চুলের জন্য, চুলকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করতে এবং চুলকে ঝলমলে করতে যেমন ভাবনার অন্ত থাকে না; তেমনি সুন্দর চুল ঝরতে শুরু করলে, চুলের আগা ফাটতে শুরু করলে, চুলে লালচে ভাব দেখা দিলে, চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে গেলে অথবা চুল খুব পাতলা হলে চুলের আলাদা যত্নের প্রয়োজন হয়। সবদিক বিবেচনায় চুলের যত্ন করতে হবে। চুলের ধরন বিচার না করে কোনো ট্রিটমেন্ট নেওয়া, চুল রাঙানোর ক্ষেত্রে মানসম্মত রং ব্যবহার না করা, ব্লিচের ব্যবহার, রিবন্ডিংয়ে মানসম্মত রাসায়নিক সঠিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার না হলে চুল অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের চুল কোমলতা, মসৃণতা হারিয়ে একেবারে রুক্ষ হয়ে পড়ে আর্দ্রতাহীন আবহাওয়ার কারণে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর নকল প্রসাধন এসেছে । অনেক সময় নকল শ্যাম্পু ইত্যাদি প্রসাধন ব্যবহারও মেয়েদের চুলের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। চুলের সুরক্ষা চাইলে সব সময় ভালো ব্র্যান্ডের প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। লেবেল পড়ে ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখেই উপযোগী প্রসাধনী কেনা উচিত। পারলারেও হেয়ার ট্রিটমেন্টে মানসম্মত প্রসাধনীর ব্যবহার করা উচিত। চুলের ক্ষেত্রে প্রসাধন ব্যবহার করার সময় বিশেষ কয়েকটি দিকে খেয়াল রাখা দরকার। * বেশি ফেনা মানেই বেশি চুল পরিষ্কার_এ ধারণা ঠিক নয়। শ্যাম্পুতে যে ফোমিং এজেন্ট থাকে তা থেকে ফেনা তৈরি হয়। তাই কম ফেনা হলেও ক্ষতি নেই। * শ্যাম্পু ব্যবহারের আগে জেনে নিন আপনার চুলের প্রকৃতি কেমন। শুষ্ক, তৈলাক্ত, স্বাভাবিক, সেনসেটিভ- সব ধরনের চুলের জন্য আলাদা আলাদা শ্যাম্পু রয়েছে। * খুশকি পরিষ্কার করার জন্য শ্যাম্পুতে ক্ষারজাতীয় পদার্থ বেশি থাকে; তাই প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। এ ক্ষেত্রে বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। * শ্যাম্পু ব্যবহার করে ত্বক বা চোখে কোনো রকম অস্বস্তি হলে ব্র্যান্ড বদল করুন। * কন্ডিশনার মাথার স্ক্যাল্পে লাগাবেন না। চুলে লাগান। তৈলাক্ত চুলে কন্ডিশনার না লাগালেও চলে। রুক্ষ চুলে কন্ডিশনার লাগানো জরুরি। * পারফিউমড অয়েল ব্যবহার করে স্ক্যাল্পে বা ত্বকে অস্বস্তি হলে লাগানো বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। * কালারড হেয়ারের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। তারপর বিশেষ কন্ডিশনার লাগান। * শ্যাম্পু ও তেল টানা দুই বছর ব্যবহার করা যায়। এর বেশিদিন হলে কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়।

চুলের যত্নে দেশী উপকরণঃ

প্রাকৃতিক উপাদানের চেয়ে ভালো প্রসাধন আর হতেই পারেনা। তাই চুলের পুষ্টিতে ও চুলের বিভিন্ন ধরণ অনুযায়ী বেছে নিন প্রাকৃতিক ভেষজগুণসম্পন্ন প্রসাধন। যার ব্যবহারে আপনার চুল হবে মজবুত, ঘন, সুস্থ ও সবল।

ত্রিফলাঃ
আমলকী, হরীতকী আর বহেড়াকে ক্রিফলা বলা হয়। এই তিনটি ফলের সংমিশ্রণের নাম দেয়া হয়েছে ত্রিফলা। প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ত্রিফলায় রয়েছে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক উপাদান যা ব্যবহারে চুল হয় লম্বা কালো ও ঘন। চুলপড়ার প্রতিষেধক হিসেবে রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে দু’ঘণ্টা রেখে যে কোন ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া ত্রিফলাযুক্ত তেল ব্যবহারেও উপকার পাবেন।

মেথিঃ
এই সুগন্ধী ভেষজটি এসেছে কাশ্মীর এবং গঙ্গার উপরাংশের সমভূমি থেকে। এর চুল কন্ডিশনিং এবং জীবাণুনাশক গুণাগুণ মাথার চামড়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ ও চুলপড়া বন্ধ করে এবং মাথা ঠান্ডা রাখে। ২ চা চামচ মেথি রাতে অল্প পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন নরম হলে একটি আমলকী বিচি বাদ দিয়ে এর সঙ্গে মিহি করে বেটে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ২ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিন। চুলপড়া বন্ধে অব্যর্থ। দু’তিনবার ব্যবহার করলেই এর সুফল বুঝতে পারবেন।

মেহেদীঃ
প্রাচীনকালে হেনা কিংবা মেহেদিকে সৌন্দর্য উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে এই মেহেদি পাতা বেটে হেনা ডাই হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পর্ণমোচিগাছের এই সুগন্ধী ফুল ও মূল লতাগুল্ম সমন্বিত গুণাগুণ চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়, ঝলমলে করে তোলে, চুলের অতিরিক্ত তেলতেলে ভাব ও খুশকি দূর করে। হেনায় গ্লুকোজের ভাগ থাকে বলে মাথা ঠান্ডা রাখে।

জবাঃ
দোলদোলানো বাহারি গুণের বিখ্যাত এই লাতগুল্ম শোভিত ছোটখাটো নরম গাছটি চুল পুনরুৎপাদন এবং মজবুত করে তোলে। এটি চুলের টনিক যা চুলকে ঘন করে তোলে। জবার তেল খুব উপকারী।

ব্রাক্ষ্মীঃ
ব্রাক্ষ্মীর অন্যতম উপাদান হলো এ্যালকালয়েড, গ্লাইকোসাইড, রেসিন, টেনিন, অরগ্যানিক এ্যাসিড এবং স্নেহ জাতীয় উপাদান, যা মাথায় সুচারুরূপে রক্ত সঞ্চালন করে, মাথা ঠান্ডা রাখে।

নিমঃ
প্রাচীনকাল থেকেই নিমকে এ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিম তেলের প্রধান উপাদান হলো সালফার। ভিটামিন-ই যুক্ত এই সালফার চুলকে পুষ্টি জোগায় এবং চুলকে অকালপক্কতার হাত থেকে রক্ষা করে।

লেবুঃ
এ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান হিসেবে পরিগণিত। এ ছাড়া লেবু চুলের খুশকি প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দুধ ও লেবুর মিশ্রণ চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করলে খুশকি দূর হবে। শ্যাম্পু করার পর পানিতে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে চুল ধুলে চুল ঝকঝকে রেশম কোমল ও মনোরম হয়ে ওঠে।

রোজমেরি তেলঃ
রোজমেরিকে এ্যান্টিসেপ্টিক ও চুলের রক্ষা কবচ বলা হয়। রোজমেরি একটি শক্তিশালী এ্যান্টিডেনড্রাফ। এছাড়া এই তেলে কয়েকটি বৈজ্ঞানিক উপাদান আছে যা মাথায় আরাম পৌঁছায় এবং শ্যাম্পু, টনিক ও তেল তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।

নারকেল তেলঃ
ইউনানি মতানুযায়ী যে কোন নারকেল তেলই চুলের পুষ্টি বিধান করে তাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখে। কারণ এই তেলে আছে ভিটামিন-ই, এফ ফাইলমটারোলস, স্কুয়ালেস। এসব বৈজ্ঞানিক উপাদান চুলকে করে তোলে রেশম কোমল, মনোরম, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ও সুন্দর। এছাড়া প্রতিবার চুল শ্যাম্পু করার আগের রাতে মাথায় নারকেল তেল গরম করে চুলের গোড়ায় ঘষে ঘষে লাগান। পরদিন ১টি ডিমের সাদা অংশ এবং পরিমাণ মতো মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় লাগান। ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর যে কোন ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।

সুত্রঃ priyo

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।