”প্রসাধনী” চুলের প্রসাধনী ব্যবহার

চুল রাঙানো বা আগাগোড়াচুলের ধরন বদল এখন ভীষণ জনপ্রিয় হেয়ার ফ্যাশন। কয়েক গাছি চুলে রং চড়িয়ে হাইলাইট, পুরো চুলের রং বদলে কিংবা রিবন্ডিং করে দীর্ঘমেয়াদি চুল সোজা করা তো আছেই। এ ছাড়া পার্টিতে যেতে মাঝেমধ্যেই আয়রন করে চুলটাকে চটজলদি সোজা করে নেওয়া, কার্ল করা, স্প্রে, টুকটাক ব্লো-ড্রাই ইত্যাদি মেয়েরা হরদমই করছে। এ সময়ের শুষ্ক আবহাওয়ায় এমনিতেই চুলের মলিন দশা। আর এতসব ধকল সওয়া চুলে আবহাওয়ার রুক্ষতার প্রভাবটা যেন একটু বেশিই কড়া। সাধারণ চুলের চেয়ে কেমিক্যালি বা হিট-ট্রিটেড চুলে সমস্যা বেশি হয়। আবহাওয়ার আর্দ্রতাহীনতায় চুলে প্রচণ্ড শুষ্কতা, খুশকি, আগা ফেটে যাওয়া, শুকনো বাতাসে ধুলোবালি জমে গোড়ায় ময়লা হওয়া, চুল পড়া, চুলভেঙে যাওয়া – এগুলো বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাঙানো চুল হারায় ঔজ্জ্বল্য। তাই শীতে এমন ট্রিটেড চুলের রক্ষণাবেক্ষণেরজন্য চাই একটু বাড়তি যত্ন।

ক্ষতির কারণঃ

চুলের ধরন বিচার না করে কোনো ট্রিটমেন্ট নেওয়া, চুল রাঙানোর ক্ষেত্রে মানসম্মত রং ব্যবহার না করা, ব্লিচের ব্যবহার, রিবন্ডিংয়ে মানসম্মত রাসায়নিক সঠিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার না হলে চুল অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের চুল কোমলতা, মসৃণতা হারিয়ে একেবারে রুক্ষ হয়ে পড়েআর্দ্রতাহীন আবহাওয়ারকারণে। বর্তমানে বাজারে প্রচুর নকল প্রসাধনী আসছে। অনেক সময় নকল শ্যাম্পু ইত্যাদি প্রসাধন ব্যবহারও মেয়েদের চুলের ক্ষতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এছাড়া চুল পড়ার পেছনে খাদ্যাভ্যাস, খুশকি, কোনো শারীরিক সমস্যাসহ অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই চুল পড়া রোধ করতে এর সঠিক কারণটা নির্ণয় করতে হবে কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে। চুলের সুরক্ষা চাইলে সব সময় ভালো ব্র্যান্ডের প্রসাধনীব্যবহার করতে হবে। লেবেল পড়ে ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখেই উপযোগী প্রসাধনী কেনা উচিত। পারলারেও হেয়ার ট্রিটমেন্টে মানসম্মতপ্রসাধনীর ব্যবহার করা উচিত।

চুলের যত্নঃ

– রাঙানো বা রিবন্ড করাচুল সুরক্ষিত রাখার প্রথম শর্তই হলো চুলেরধরন ও মান অনুযায়ী শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করা। বাজারে রং করা চুলের জন্য বিশেষ ধরনের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার পাওয়া যায়। ডিপ কন্ডিশনার ও ইউভি-রোধক সমৃদ্ধ কন্ডিশনার খুব উপকারী হবে।
– খুশকি থাকলে অ্যান্টি-ড্যানড ্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে।
– পারলারে করে নিন চুলের প্রোটিন কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্টও অয়েল ম্যাসাজ। মাসে দুই বার করাতে পারলে খুবই ভালো হবে।
– রিবন্ড করা চুলের জন্য শীতে কাজে দেবে ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট ও হেয়ার স্পা। ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট বাসায়ও করতে পারেন। শ্যাম্পুর পর ডিপ কন্ডিশনিং ক্রিম (বাজারে পাবেন) ২০-২৫ মিনিট চুলে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। বাজারে পাবেন হেয়ার স্পা ক্রিম। স্পা বাসায় করতে হেয়ার স্পাক্রিম পাঁচ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর কুসুম গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে নিংড়ে নিয়ে চুলে জড়িয়ে রাখুন২০-২৫ মিনিট। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
– বাসায় কিছু চুলের প্যাকও বানিয়ে নিতে পারেন। যেকোনো প্যাক লাগানোর আগে তেল দিয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। নারকেল তেল ছাড়াওভালো ব্র্যান্ডের জলপাই তেল পাওয়া গেলে দিতে পারেন চুলে। খুশকি তাড়াতে একটা ডিমও দুই টেবিল চামচ টক দইয়ের প্যাক খুব উপকারী। এর সঙ্গে দিতেপারেন এক চা-চামচ ভেজানো মেথি বাটা। ৩০-৪০ মিনিট চুলে লাগিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
– পাকা কলা পেস্ট করে ৩০-৪০ মিনিট চুলে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
– তেল দিয়ে মেহেদি, একটাডিম ও দুই টেবিল চামচ টক দইয়ের প্যাকও ব্যবহার করা যেতে পারে। যদি আপনার চুলেরধরনের সঙ্গে মেহেদি খাপ খায়।
– রাঙানো চুলে বাসায় কোনো ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের আগে কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নিন। কারণ টকজাতীয় অর্থাৎ এসিডিক কিছু যেমন�টক দই বা লেবু ইত্যাদির ব্যবহারে চুলের রং ফিকে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
– চুল পড়া রোধে তেল ও ক্যাস্টর অয়েল একসঙ্গে হালকা গরম করেনিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে তাতে ভিটামিন-ই ক্যাপসুল ভেঙে মিশিয়ে চুলে লাগান।
– আমলকীর রস বা আমলকী বাটাও চুল পড়া রোধে বেশ কার্যকরী।
– হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে হলে চুল থেকে একটু দূরে ধরে রেখে ড্রায়ারের কোল্ড বোতাম চেপে ঠান্ডা বাতাস দিয়ে চুল শুকিয়েনিন।
– খাদ্যাভ্যাস একটা বড় ভূমিকা পালন করে চুলেরসুরক্ষায়। তাই প্রচুর পানীয় গ্রহণ করা উচিত।বেশি করে পানি ও ফলের রস খান। পাকা পেঁপের রস চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। শীতকালীন ফল, সবজি ও পানির অংশ বেশি এমন খাবার যেমন�লাউ, শশা বেশি করে খান।

সতর্কতা

যাঁরা চুল রাঙাবেন, সোজা করবেন বা নতুন কোনো স্টাইল দেবেন বলেভাবছেন তাঁরা আগেই কিছু সতর্কতা অবলম্বন করুন। যাতে চুলের গড়পড়তা ক্ষতিটাকে কমিয়ে আনা যায়। সবচেয়েজরুরি বিষয় হলো, চুলে এ ধরনের কোনো কিছু করার আগে পারলারে গিয়ে সেখানকার বিশেষজ্ঞের কাছে নিজের চুলের ধরণ নিয়ে আলাপ করে নেওয়া। তাহলে চুলে কোন রং ভালো বসবে, চুলটা রিবন্ডিংয়ের উপযুক্ত কি না, আগে একটা হেয়ার ট্রিটমেন্ট লাগবে কি না এবং আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী কালারড ও রিবন্ডিং করা চুলের যত্নে কী উপাদান কার্যকরী হবে তাও বোঝাযাবে। ভালো পারলারে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শে, চুলের ধরন অনুযায়ী ভালো রং ও রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহূত হচ্ছে কি না সেসব অবশ্যই জেনে ও যাচাই করে নেওয়ার সচেতনতাটা যদি অবলম্বন করতে পারেন ও পরবর্তী সময়ে সঠিক পরিচর্যা করতে পারেন তাহলে চুলের ক্ষতি ৬০-৭০ শতাংশ কমিয়ে আনা যায়।

সূত্র ; Facebook

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।