”শিশুর যত্ন” শিশুর গলায় কোন কিছু আটকে গেলে কি করবেন

বাচ্চাদের মধ্যে, বিশেষ করে এক থেকে পাঁচ বৎসর বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে নানান জিনিস মুখে দেয়ার একটা অভ্যাস থাকে। প্রায় সব বাচ্চাদের মধ্যেই এটা দেখা যায়, এভাবেই তারা পৃথিবীটাকে চিনতে চায়। মার্বেল, রাবার বা এরকম ছোট ছোট কিছু জিনিস শিশুরা যখন মুখে দেয়, অনেক সময় সেটা তাদের গলায় আটকে যায়, বিষম খেতে শুরু করে।

বুঝতে পারার সাথে সাথে যা করতে হবে

শিশুর মুখ খুলে যদি গলার মধ্যে আটকে যাওয়া জিনিসটি দেখতে পান, সাবধানতার সাথে বের করে ফেলুন। তবে অন্ধভাবে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না, এতে আটকে যাওয়াটি জিনিসটি আরো ভিতরে ঢুকে বিপদ আরো বাড়াতে পারে

শিশু যদি জোরে জোরে কাশতে থাকে, তবে তখনই কিছু করার প্রয়োজন নাই। শিশুকে কাশতে দিন, আরো জোরে কাশতে বলুন। শিশুর সাথে থাকুন। কাশির সঙ্গে আটকে যাওয়া জিনিসটি বের হয়ে আসতে পারে

যদি শিশু ঠিকমত কাশতে না পারে বা শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়, সাহায্যের জন্য চিৎকার করুন। শিশুর জ্ঞান আছে কিনা বুঝার চেষ্টা করুন

যদি শিশুর জ্ঞান থাকে এবং ঠিকমত কাশতে না পারে, শিশুর পিঠ চাপড়ে দিতে থাকুন

এক বৎসরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে পিঠ চাপড়ানোর নিয়ম

শিশুকে এমন ভাবে রাখুন যেন মাথা নিচের দিকে থাকে, এতে অনেকসময় মধ্যাকর্ষণ জনিত ভরের কারনে গলায় আটকে যাওয়া বস্তু বের হয়ে আসতে পারে্। এটা করার জন্য আপনি বসে বা হাটু মুড়ে আধ-বসা হয়ে, শিশুর মাথাকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে শিশুকে কোলে নিন

গলায় আটকে যাওয়া বস্তু বের করার জন্য শিশুর চোয়ালের নিচের নরম জায়গায় চাপাচাপি করবেন না, এতে আটকে যাওয়াটি জিনিসটি আরো ভিতরে ঢুকে বিপদ আরো বাড়াতে পারে

শিশুর পিঠের মাঝখানে, একটু উপরের দিকে আপানার হাতের তালুর নিচের অংশ দিয়ে জোরে জোরে পাঁচ বার চাপড় দিন।

এক বৎসরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে পিঠ চাপড়ানোর নিয়ম

শিশুর মাথাকে নিচের দিকে ঝুলিয়ে রাখতে পারলে ‘পিঠ চাপড়ানো’ অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়

শিশু ছোট হলে আপনি বসে, শিশুকে আপনার কোলের উপর আড়াআড়ি ভাবে উপুড় করে শুইয়ে, মাথা ঝুলিয়ে দিন

শিশু বড় হলে, শিশুকে ধরে যতটা সম্ভব সামনের দিকে ঝুকে বসতে সাহায্য করুন। তারপর পিছন দিক থেকে পিঠ চাপড়ে দিন

পিঠ চাপড়ানোতে যদি কাজ না হয় এবং তখনও যদি শিশুর জ্ঞান থাকে, তবে বুকে চাপ দিয়ে চেষ্টা করুন। এক বৎসরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে বুকে চাপ দিন, এক বৎসরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে পেটে চাপ দিন। এতে শিশুর কাশি শুরু হবে, কাশির ফলে গলায় আটকে যাওয়া বস্তু বের হয়ে আসতে পারে।

এক বৎসরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে বুক চাপ দেয়ার নিয়ম

এটা করার জন্য আপনি বসে বা হাটু মুড়ে আধ-বসা হয়ে, আপানার উরুর উপর দুই হাত রেখে, তার উপর শিশুকে চিত করে শুইয়ে দিন

এবার শিশুর বুকের মাঝখানের চওড়া হাড়ের (breast bone) উপর দুই আঙ্গুল দিয়ে এমনভাবে চাপ দিন যেন বুক এক তৃতীয়াংশের মত ডেবে যায়

এক বৎসরের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে পেটে চাপ দেয়ার নিয়ম

শিশুর পিছনে হাটু মুড়ে বা সোজা হয়ে দাড়ান, শিশুর বগলের নিচ দিয়ে দুই হাত ঢুকিয়ে, জাপটে ধরার ভঙ্গিতে শিশুর পেটের উপরের অংশ বরাবর আপনার হাত রাখুন

এবার এক হাত মুষ্টিবদ্ধ করে, শিশুর বুকের সামনে চওড়া হাড়ের (breast bone) নিচে, যেখানে দুই পাশের পাজরের শেষের হাড়টি মিলিত হয়েছে সে জায়গায় রাখুন

এবার অন্য হাত দিয়ে এই হাতটির কব্জি চেপে ধরুন, তারপর দুইহাত দিয়ে উপর এবং ভিতর দিক বরাবর শিশুর পেটে জোরে চাপ দিন

এভাবে পর পর পাঁচবার চাপ দিন

লক্ষ রাখতে হবে শিশুর পাঁজরের হাড়ে যেন চাপ না লাগে, এতে পাঁজর ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে

বুকে চাপ বা পেটে চাপ দেয়ার পর, এবার আপনার শিশুর অবস্থা বুঝার চেষ্টা করুন

এরপরেও যদি আটকে যাওয়া বস্তুটি বের হয়ে না আসে এবং তখনও শিশুর জ্ঞান থাকে, তবে পুরো প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যেতে থাকুন। প্রথমে পিঠ চাপড়ে দেয়া তারপর বুক বা পেটে চাপ দেয়া – এভাবে করতেই থাকুন

এতক্ষনেও যদি সাহায্যের জন্য কেউ না এসে থাকে, সাহায্যের জন্য চিৎকার করুন

শিশুকে কোন অবস্থাতেই একা রাখা যাবে না

বিষম খাওয়ার কারনে শিশু অজ্ঞান হয়ে পড়লে

বিষম খাওয়ার শুরুতেই যদি শিশু অজ্ঞান হয়ে পরে বা আপনার জীবনরক্ষার চেষ্টা করার সময়টাতে যদি শিশু জ্ঞান হারায়, একটা সমতল জায়গায় শিশুকে চিত করে শুইয়ে দিন

সাহায্যের জন্য চিৎকার করুন

শিশুকে একা ফেলে যাবেন না

শিশুর মুখ খুলুন, যদি গলার মধ্যে আটকে যাওয়া জিনিসটি দেখতে পান, সাবধানতার সাথে বের করে আনার চেষ্টা করুন

শিশুর শ্বাসক্রিয়া এবং হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে যেভাবে পুনরূজ্জীবিত (Resuscitate) করতে হয় – সেই নিয়ম অনুযায়ী শিশুর জীবন রক্ষা করার চেষ্টা করুন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ‘শিশুর শ্বাসক্রিয়া এবং হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে কিভাবে জীবন রক্ষা করবেন’ অধ্যায়টি পড়ুন।

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, যদি গলার মধ্যে আটকে যাওয়া জিনিসটি দেখতে না পান, তবে অন্ধভাবে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না, এতে আটকে যাওয়াটি জিনিসটি আরো ভিতরে ঢুকে বিপদ আরো বাড়াতে পারে।

সূত্র ; maya

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।