”শিশুর যত্ন” বাচ্চার সেলফ কনফিডেন্স তৈরিতে বাবা মার করনীয়

আত্মবিশ্বাসী বাচ্চা জীবনের অনেক প্রতিকূলতা খুব সহজেই মোকাবেলা করতে পারে। জীবনের সকল পদক্ষেপ সঠিক ভাবে নিতে সেলফ কনফিডেন্স দারুণ সহায়তা করে থাকে।

বাচ্চার সেলফ কনফিডেন্স এর বুনিয়াদ শুরু হয় নিজের ঘর থেকেই। তাই বাবা-মার উচিৎ কিভাবে বাচ্চার সেলফ কনফিডেন্স বাড়ানো যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখা।

বাচ্চার সেলফ কনফিডেন্স তৈরিতে বাবা মার করনীয়ঃ

১। বাবা মার সাথে সন্তানের বন্ধন তৈরি

বাবা মার সাথে সন্তানের বন্ধন বর্তমান সময়ে একটি বেশ আলোচিত একটি বিষয়। বাবা মা হল সন্তানের প্রথম ও শেষ আশ্রয়স্থল। বাবা-মা সন্তানের বেড়ে ওঠার একমাত্র অবলম্বন। বাবা মার সাথে সুসম্পর্ক প্রতিটি শিশুর মানসিক বিকাশে অন্যতম আলেখ্য যা একটি বাচ্চাকে নিজের উপর আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে খুব সাহায্য করে থাকে। তাই প্রতিটি বাবা-মার ই উচিৎ ছোটবেলা থেকেই সন্তানদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলা। বাচ্চার সব প্রয়োজন সঠিক ভাবে পূরণ করা।

২। বাবা মার আত্মবিশ্বাস বাচ্চার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া

সন্তানকে আত্মবিশাসী হিসেবে গড়ে তুলতে হলে বাবা-মার নিজেদের আগে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।নিজের সকল কাজে এই আত্মবিশ্বাস ছড়িয়ে দিতে হবে যাতে করে বাচ্চারা তাদের বাবা-মার আত্মবিশ্বাস দেখে নিজেকে উৎসাহী হতে পারে। বাবা-মার নিজেদের ছোটবেলা থেকে স্মৃতি রোমন্থন করতে হবে।নিজেরা ছোটবেলায় কি কি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই চেষ্টা করতে হবে।

৩। বাচ্চার প্রতি সব সময় পজিটিভ থাকা

নিজের বাচ্চার প্রতি সব সময় তার বাব-মাকে পজিটিভ থাকতে হবে। অন্যের বাচ্চার সাথে নিজের বাচ্চার তুলনা করা যাবে না (বাচ্চার সামনে তো নয়ই)। বাচ্চাকে সব সময় তার নিজের মত করে গড়ে তুলতে সাহায্য করতে হবে। এতে করে বাচ্চারা নিজেদের প্রতি নিজেরা আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে পারবে অনায়াসে। বাচ্চার প্রতি বাবা- মার আস্থা বাচ্চাকে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলে। তাই বাবা- মাকে নিজের বাচ্চার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে।

৪। বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করা

বাচ্চার সাথে বাবা-মার হাজার ব্যস্ততার মাঝেও গুণগত সময় ব্যয় করতে হবে। বাচ্চার সাথে সময় ব্যয় না করলে বাচ্চারা বাবা-মার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে যা বাচ্চার ভবিষ্যৎ এর জন্য খুব খারাপ হতে পারে। বাচ্চাদের সাথে সময় পেলেই খেলাধূলো করতে হবে। খেলাধূলার মাধ্যমে বাচ্চাদের অনেক কাছাকাছি আসা যায় যা বাচ্চাদের সাথে বাবা-মার দূরত্ব অনেক কমিয়ে ফেলে।

৫। বাচ্চার অন্তর্নিহিত গুনাবলী খুজে বের করা

বাবা-মার বাচ্চাদের উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে সাহায্য করতে হবে। বাচ্চাদের কোনো প্রতিভা থাকলে তা বাবা- মা ই প্রথম সনাক্ত করতে পারে। সেই প্রতিভাকে লালন পালন করতে বাবা-মা সব চাইতে বেশি সাহায্য করে থাকে। বাবা-মার উৎসাহ দেখে ছেলে মেয়েরা নিজেদের প্রতি আস্থাশীল হয় যা বাচ্চার আত্ননির্ভরশীলতায় যথেষ্ট সহায়তা করে থাকে।

৬। বাচ্চার ভাল লাগা, মন্দ লাগার বিবেচনা করা

বাচ্চার উপর কোন কিছু চাপিয়ে দেয়া যাবে না। বাচ্চার ভাল লাগা, মন্দ লাগার মূল্য দিতে হবে। বাচ্চা কি চায়, কিসে বাচ্চারা অধিক আগ্রহ খুঁজে পায় তার ব্যবস্থা বাবা মায়ের- ই করতে হবে। বাবা-মায়ের নিজেদের ইচ্ছে-অনিচ্ছে, চাওয়া-পাওয়া বাচ্চার মধ্যে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করা যাবে না। বাচ্চার নিজের ইচ্ছে-অনিচ্ছের ওপর বাবা- মার আস্থা রাখতে হবে।

৭। বাচ্চার সাফল্য ও বিফলতায় সব সময় পাশে থাকা

বাচ্চা ছোট থেকে বড় হওয়ার সময়টাতে অনেক বাধা বিপত্তির মধ্যে বেড়ে উঠতে হয়। এই পথ চলায় সবক্ষেত্রে বাচ্চারা সফল হবে তেমন ভাবার কোন কারন নেই। বাচ্চার ছোট থেকে বড় হওয়ার এই পথ চলায় বাবা-মাকে সর্বদা বাচ্চার সাথে থাকতে হবে। সাফল্যে যেমন বাবা-মা খুশিতে আত্মহারা হবে তেমনি কোন কাজে বিফল হলেও তাকে সান্ত্বনা দিতে হবে। তার থেকে মুখ সরিয়ে নিলে চলবে না। এরূপ ব্যবহারে বাচ্চারা নিজেদের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে এবং ভবিষ্যতের পথ চলায় অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী হবে।

৮। বাচ্চার পড়াশোনায় সাহায্য করা

বাচ্চাদের পড়াশোনায় বাচ্চারা সব সময় তার বাবা-মাকে কাছে পেতে চায়। বাবা-মা শিশুদের সাথে স্কুলে যেতে পারে। বাচ্চার পড়াশোনার খবরাখবর নিতে পারে। বাচ্চার সাথে স্যারদের ব্যবহার, বাচ্চার প্রতি স্যারদের অভিব্যক্তি ইত্যাদি খোঁজ খবর নিতে পারে। বাচ্চার পড়াশোনায় শুধু উপদেশ না দিয়ে পাশে বসে সাহায্য করতে পারে। এসব করলে বাচ্চা আর একা বোধ করবে না। ফলে নিজের আত্মনির্ভরশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।

৯। বাচ্চার সাথে খোলাখুলি কথা বলা

বাচ্চার সাথে সব বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলতে হবে। বাচ্চারা যাতে বাবা-মার কাছে কোন কিছু গোপন করার চেষ্টা না করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বাচ্চারা যদি বাবা-মাকে বন্ধু ভাবতে না পারে তাহলে ভবিষ্যতে জীবনের অনেক কথা গোপন করার চেষ্টা করবে যা বাচ্চার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে এবং খারাপ সঙ্গ পেতে সাহায্য করবে। তাই বাবা-মাকে বাচ্চার প্রতি সব সময় খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। কোনকিছুতে অহেতুক রাগ বা মন-মালিন্য ঘটানো যাবে না যা বাচ্চার আত্মনির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

সূত্র ; Facebook

 

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।