সৌন্দর্যচর্চায় ঘরে তৈরি গোলাপ ফুলের ফেইস প্যাক আর পারফিউম

সাজসজ্জা
আমরা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে এবং পারফিউমের পেছনে প্রায় অনেক টাকাই খরচ করি। কিন্তু কত টুকু লাভ হয়? রাতারাতি কি আপনার রঙ উজ্জ্বল হয়ে যাচ্ছে? বরং একেক সময় একেক কেমিকেল ব্যবহার করে আপনার ত্বকের ক্ষতি করছেন। পারফিউমেও অনেক কেমিকেল থাকে যা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এর চাইতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা অনেক ভালো। হয়ত প্রস্তুত করতে একটু সময় লাগবে কিন্তু আপনার ত্বকে কোন কেমিকেল প্রভাব বিস্তার করবেনা অন্তত এটা ভেবে নিশ্চিন্তে সেটা ব্যবহার করতে পারবেন। গোলাপ ফুলের পাপড়ি এমন একটি উপাদান যা আপনি কোন দুশ্চিন্তা ছাড়াই সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহার করতে পারবেন আর আমাদের দেশে গোলাপ ফুল পাওয়া কোন ব্যাপার না। যে কোন ফুলের দোকানে পেয়ে যাবেন, আর নিজেদের গাছ থাকলে তো কোন সমস্যাই নেই। তাই আজকে সৌন্দর্যচর্চায় গোলাপ ফুলের পাপড়ির ব্যবহার তুলে ধরা হলো –

০১. ত্বক উজ্জ্বল করতে গোলাপ ফুলের ফেইস প্যাকঃ

এই ফেইস প্যাক ব্যবহারের আগে মুখ ভালো মত ধুয়ে নিন। টোনার ব্যবহার করতে পারেন। এরপর তুলো পানিতে ভিজিয়ে আরেকবার মুখ পরিষ্কার করে ফেইস প্যাক টি ব্যবহার করুন। এর জন্য যা যা লাগবে –

• ২/৩ টি গোলাপ ফুল

• চালের গুঁড়ো

• সামান্য পানি

পদ্ধতিঃ

যে কোন রঙের গোলাপ ফুলের পাপড়ি এই ফেইস প্যাক তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন। লাল বা গোলাপি রঙের হতে হবে এমন কোন বাঁধা ধরা নিয়ম নেই। প্রথমে ২/৩ টি গোলাপ ফুল ভালো মত পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। সব গুলো পাপড়ি আলাদা করে ফেলুন। ২ /৩ চা চামচ চালের গুঁড়ো নিন। তারপর অল্প পানি নিয়ে চালের গুঁড়োর সাথে পাপড়ি গুলো বেটে নিন। ব্লেন্ডারেও ব্লেন্ড করে নিতে পারেন। এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন মিশ্রণ টি ক্রিমের মত হয়, অর্থাৎ পানি একবারে না দিয়ে একটু একটু করে মিশিয়ে বাটতে হবে। এবার মিশ্রণটি মুখ, গলা আর ঘাড়ে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রথম সপ্তাহে ৩ দিন এটি ব্যবহার করুন। এরপর থেকে প্রতি সপ্তাহে একবার ব্যবহার করুন। কড়া রোদ থেকে দূরে থাকুন আর কোন ত্বক ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কয়েক দিন পর আপনার ত্বকের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারবেন।

 

০২. ত্বক উজ্জ্বল, কোমল এবং মসৃন করতে গোলাপ ফুলের পাপড়িঃ

এটি তৈরিতে যা যা লাগবে –

• গোলাপ ফুলের পাপড়ি ৭/৮ টি

• ১/৩ কাপ চালের গুঁড়ো এবং এক গ্লাস/ কাপ পানি

• গোলাপ জল ২ চা চামচ (দোকান থেকে গোলাপ জল কিনতে না চাইলে ঘরে তৈরি করে নিন। ১ কাপ পানিতে ১/২ কাপ গোলাপ ফুলের পাপড়ি সেদ্ধ করুন। ২০ মিনিট সেদ্ধ করলেই গোলাপ জল তৈরি হয়ে যাবে।)

• মধু ১ টেবিল চামচ

পদ্ধতিঃ

গোলাপ ফুলের ৭/৮ টি পাপড়ি টুকরো টুকরো করে নিন। এবার ১/৩ কাপ চালের গুঁড়োর সাথে পাপড়ির টুকরো গুলো ব্লেন্ডারে মিশিয়ে নিন অথবা বেটে নিন। এই মিশ্রণটির সাথে ২ চা চামচ গোলাপ জল, ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। আবার মিশ্রণ টি বেটে নিন নাহলে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এরপরেও যদি ভালো মত না মিশে তাহলে হাত দিয়ে চটকে নিন। এবার এই মিশ্রণ মুখে, গলায় দিয়ে ৩০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন যে এটি ব্যবহার করলে যেন খুব হালকা গরম পানি দিয়েই মুখ ধোয়া হয়।

 

 ০৩. গোলাপের এসেন্সিয়াল অয়েল আর গোলাপ ফুলের ফেসিয়াল মাস্কঃ

এটি তৈরিতে যা যা লাগবে –

• চালের গুঁড়ো ১/৩ কাপ

• মধু ৪ টেবিল চামচ

• ১৫/২০ টি গোলাপ ফুলের পাপড়ি বাটা, ১০/১২ টি পাপড়ি আর গোলাপজল ১ টেবিল চামচ

• গোলাপের এসেনসিয়াল তেল ৩/৪ ফোঁটা

পদ্ধতিঃ

প্রথমে গোলাপের এসেনসিয়াল তেল তৈরি করতে হবে যেহেতু ২ দিনের মত সময় প্রয়োজন। তবে একবার প্রস্তুত করলে ২ সপ্তাহ ব্যবহার করতে পারবেন। ১০/১২ টা পাপড়ি নিয়ে একটি ঢাকনা সহ পাত্রে নিন। পাপড়ি গুলোর উপর নারিকেল তেল অথবা অলিভ অয়েল ঢেলে নিন। এরপর পাত্রের মুখ ঢেকে ২৪ ঘণ্টা রেখে দিন। ২৪ ঘণ্টা পরে পাত্র থেকে পাপড়ি গুলো বের করে নতুন আরও কয়েকটি পাপড়ি তেলের মধ্যে রেখে দিন। আরও ২৪ ঘণ্টার জন্য রেখে তারপর পাপড়ি গুলো বের করে নিন। ২ বার-ই পাপড়ি গুলো বের করার সময় সেগুলো চেপে তেল গুলো পাত্রে ফেলে নিবেন। আপনি চাইলে শুধু ২৪ ঘণ্টার জন্য রেখেও তেল প্রস্তুত করতে পারেন। তবে যত বেশি বার এরকম করবেন তত ভালো তেল হবে। তেল প্রস্তুত হলে তেলের সাথে চালের গুঁড়ো, মধু, পাপড়ি বাটা সব মিশিয়ে মুখে, গলায়, ঘাড়ে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

 

০৪. গোলাপ ফুলের পারফিউমঃ

• পানি ২ কাপ

• গোলাপের পাপড়ি কুঁচি ২ কাপ (পাপড়ি গুলো যেন মোটা না হয়, কারণ পাপড়ি যত পাতলা হবে তার ঘ্রাণ তত বেশি হবে, আর তাজা ফুল হতে হবে)

• গোলাপ জল

• স্প্রে বোতল

পদ্ধতিঃ

২ কাপ পরিমাণ পানি একটি পাত্রে ঢেলে ঢাকনা দিয়ে খুব অল্প আঁচে চুলায় গরম করুন। পানি গরম হলে পাপড়িগুলো চুলায় রাখা পাত্রে ঢেলে দিন। পাপড়ি গুলো রেখে দিন ভেতরে, এবং এমন ভাবে রাখবেন যেন পাপড়ি গুলো পুরো পুরি পানিতে ডুবে থাকে। যদি উপরে ভেসে উঠে তাহলে চামচ দিয়ে চেপে পানির নিচে রাখুন। ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট খুব অল্প আঁচে চুলায় দিয়ে রাখুন। পানি যেন না শুকায়। ৩০/৪৫ মিনিট পরে একটি কাঁচের পাত্রে পাপড়ি সহ পানি ছেঁকে নিন। যত টুকু সম্ভব পাপড়ি গুলো চেপে চেপে পানি বের করে নিবেন। অল্প একটু গোলাপ জল মিশিয়ে নিন। এবার একটি স্পে বোতলে ঢেলে নিন। আপনার পারফিউম এখন তৈরি। এটি ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করুন। বাইরে রাখলে পারফিউম নষ্ট হবেনা তবে গোলাপের ঘ্রাণ বেশি দিন থাকবেনা। তাই ফ্রিজে রাখলেই ভালো। এটি ব্যবহারের সুবিধা হলো যে আপনার শিশু-ও এটি ব্যবহার করতে পারবে যেহেতু এতে কোন কেমিকেল নেই। তাছাড়া এতে কড়া ঘ্রাণ হবেনা যার ফলে আপনি অন্য কারও বিরক্তির কারণ হবেন না।

 

সতর্কতাঃ

• যতটুকু পানি নিবেন সব সময় ততটুকু পাপড়ি কুচি নিবেন। যেমন যদি ৪ কাপ পানি হয় তাহলে ৪ কাপ পাপড়ি কুচি নিতে হবে। কারণ পানি বেশি হলে পাপড়ির ঘ্রাণ নষ্ট হয়ে যাবে।

• পানি শুকিয়ে গেলেও ঘ্রাণ থাকবেনা, তাই চুলায় অবশ্যই খুব অল্প আঁচে রাখতে হবে।

• যদি নিজের গাছ থেকেই ফুল নিয়ে থাকেন তাহলে সকালে নিবেন, এতে ঘ্রাণ বেশি থাকবে।

• পাপড়ি অবশ্যই ধুয়ে নিবেন, পাপড়ি ধুলে ঘ্রাণ চলে যাবেনা।
লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।