”হেলথ টিপস” কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা

আমাদের আধুনিক ডাক্তারি শাস্ত্র আর ধর্মীয় অনুভূতি যাই বলি না কেন কালোজিরা সবখানে স্বমহিমায় উজ্জ্বল। নিমকি বা কিছু তেলে ভাজা খাবারে ভিন্ন ধর্মী স্বাদ আনতে এটি বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া অনেকেই কালজিরার ভর্তা খেয়ে থাকেন। কিন্তু কালোজিরার ব্যবহার খাবারে একটু ভিন্নধর্মী স্বাদ আনাতেই সীমাবদ্ধ নয়। আয়ুর্বেদিক ও কবিরাজী চিকিৎসাতে কালোজিরার অনেক ব্যবহার হয়। কালোজিরার বীজ থেকে তেল পাওয়া যায়, যা আমাদের শরীরের জন্য খুব উপকারী। নানাবিধ ক্ষেত্রে কালোজিরা বা কালোজিরার তেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ সকল ক্ষেত্র সমূহের কিছু উল্লেখ করা হলো।

স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি –

এক চা চামচ পুদিনা পাতার রস বা কমলার রস বা এক কাপ রঙ চায়ের সাথে এক চা চামচ কালোজিরা তেল মিশিয়ে দিনে তিনবার করে নিয়মিত খাবেন। যা আপনার দুশ্চিন্ত দূর করবে। এছাড়া এটি মেধার বিকাশের জন্য কাজ করে দ্বিগুণ হারে। কালোজিরা নিজেই একটি অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিসেপটিক। মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চলন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে।

মাথা ব্যাথা নিরাময়ে –

১/২ চা চামচ কালোজিরা তেল মাথায় ভালোভাবে লাগাতে হবে এবং এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দিনে তিনবার করে ২/৩ সপ্তাহ খেলে মাথা ব্যথায় উপকার পাবেন।

সর্দি সারাতে –

এক চা চামচ কালোজিরা তেল সমপরিমাণ মধু বা এক কাপ রং চায়ের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার খেতে হবে এবং মাথায় ও ঘাড়ে রোগ সেরে না যাওয়া পর্যন্ত মালিশ করতে হবে। এছাড়া এক চা-চামচ কালোজিরার তেলের সাথে দুই চা-চামচ তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খেলে জ্বর, ব্যথা, সর্দি-কাশি দূর হবে। সর্দি বসে গেলে কালিজিরা বেটে কপালে প্রলেপ দিন। একই সঙ্গে পাতলা পরিষ্কার কাপড়ে কালিজিরা বেঁধে শুকতে থাকুন, শ্লেষ্মা তরল হয়ে ঝরে পড়বে। আরো দ্রুত ফল পেতে বুকে ও পিঠে কালিজিরার তেল মালিশ করুন।

বাতের ব্যাথা দূরীকরণে –

আক্রান্ত স্থানে ধুয়ে পরিষ্কার করে তাতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন উপকার পাবেন। এক চা চামচ কাঁচা হলুদের রসের সাথে সমপরিমাণ কালোজিরা সমপরিমান মধু মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

হার্টের বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে –

এক চা চামচ কালোজিরার গুড়া এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে ৪/৫ সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

ব্লাডপ্রেসার নিয়ন্ত্রনে রাখতে –

প্রতিদিন সকালে রসুনের দুটি কোষ চিবিয়ে খেয়ে এবং সমস্ত শরীরে কালোজিরার তেল মালিশ করে সূর্যের তাপে কমপক্ষে আধাঘন্টা অবস্থান করতে হবে এবং এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ প্রতি সপ্তাহে ২/৩ দিন খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া কালোজিরা বা কালোজিরার তেল বহুমুত্র রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং নিম্ন রক্তচাপকে বৃদ্ধি করে ও উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাস করে।

পাইলস সমস্যা নিরাময়ে –

এক চা-চামচ মাখন ও সমপরিমাণ তিলের তেল, এক চা চামচ কালোজিরার তেল সহ প্রতিদিন খালি পেটে ৩/৪ সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

শ্বাস কষ্ট বা হাঁপানি রোগ সারাতে –

যারা হাঁপানী বা শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যায় ভুগে থাকেন তাদের জন্য কালোজিরা অনেক বেশি উপকারী। প্রতিদিন কালোজিরার ভর্তা রাখুন খাদ্য তালিকায়। কালোজিরা হাঁপানি বা শ্বাস কষ্ট জনিত সমস্যা উপশম করে।

ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে –

ডায়াবেটিস রোগ উপশমে বেশ কাজে লাগে কালোজিরা। এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সঙ্গে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেয়ে দেখুন, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া রং চা বা গরম ভাতের সাথে মিশিয়ে দৈনিক ২ বার করে খেলে উপকার পাবেন।

যৌন সমস্যা সমাধান করে –

কালোজিরা নারী পুরুষ উভয়ের যৌন ক্ষমতা বাড়ায় এবং যৌন সমস্যা প্রতিরোধ করে। প্রতিদিন কালোজিরা খাবারে সাথে খেলে পুরুষের স্পার্ম সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষত্বহীনতা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা তৈরি করে। এক চা চামচ মাখন,এক চা চামচ জাইতুন তেল সমপরিমাণ কালোজিরা ও মধুসহ দৈনিক ৩ বার ৪/৫ সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

অনিয়মিত মাসিক সমস্যায় –

এক কাপ কাঁচা হলুদের রস বা সমপরিমাণ আতপ চাল ধোয়া পানির সাথে এক কাপ চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে দৈনিক ৩ বার করে খেলে কার্যকারীতা বুঝতে পারবেন।

বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে –

যেসব মায়েদের বুকে পর্যাপ্ত দুধ নেই, তাদের মহৌষধ কালিজিরা। মায়েরা প্রতি রাতে শোয়ার আগে ৫-১০ গ্রাম কালিজিরা মিহি করে দুধের সঙ্গে খেতে থাকুন। মাত্র ১০-১৫ দিনে দুধের প্রবাহ বেড়ে যাবে। এছাড়া এ সমস্যা সমাধানে কালিজিরা ভর্তা করে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন। এছাড়া এক চা চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধুসহ দৈনিক ৩ বার করে নিয়মিত খাবেন যা শতভাগ কার্যকরী।

আমাশয় নিরাময়ে –

আমাশয় রোগের চিকিৎসা করতে কালোজিরার ব্যবহার অনেক পুরোনো। এক চা-চামচ কালোজিরার তেল সমপরিমাণ মধু সহ দিনে ৩ বার করে ২/৩ সপ্তাহ খাবেন।

ত্বকের আদ্রতার জন্য –

শীতকালে ত্বকের আদ্রতার জন্য বডি লোশনের পরিবর্তে শুধু কালোজিরার তেল অথবা অলিভ অয়েল তেলের সাথে কালোজিরার তেল মিশিয়ে সারা শরীরে মালিশ করুন। যা আপনার ত্বকের যত্ন নিতে এবং চর্মরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে।

লিভারের বিভিন্ন সমস্যার দূরীকরণে –

এক গ্লাস ত্রিপলার শরবতের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল দিনে ৩ বার করে ৪/৫ সপ্তাহ খাবেন।

শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি করতে –

দুই বছরের অধিক বয়সী শিশুদের কালোজিরা খাওয়ানোর অভ্যাস করলে দ্রুত শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ঘটে। শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও অনেক কাজ করে এটি। তবে দুই বছরের কম বয়সের বাচ্চাদের কালোজিরার তেল সেবন করা উচিত নয়।

হজমের সমস্যায দূরীকরণে –

হজমের সমস্যায় এক দুই চা চামচ কালোজিরা বেটে পানির সঙ্গে খেতে থাকুন। এভাবে প্রতিদিন দু তিনবার খেলে এক মাসের মধ্যে হজমশক্তি বেড়ে যাবে। পাশাপাশি পেট ফাঁপাভাবও দূর হবে।

লিভারের সুরক্ষায় –

লিভারের সুরক্ষায় ভেষজটি অনন্য। লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী আফলাটক্সিন নামক বিষ ধ্বংস করে এটি।

চুল পড়া বন্ধ করতে –

কালোজিরা খেয়ে যান, চুল পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে ফলে চুল পড়া বন্ধ হবে। আরো ফল পেতে চুলের গোড়ায় এর তেল মালিশ করতে থাকুন।

দাঁত ব্যথা দূরীকরণে –

দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরা দিয়ে কুলি করলে ব্যথা কমে। জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে।

শান্তিপূর্ণ ঘুমের প্রয়োজনে –

মাথায় এই তেল ব্যবহারে রাতভর শান্তিপূর্ণ ঘুম হয়।

সূত্র ; Facebook

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।