সৌন্দর্য সাজে বসন্ত

হলুদ, কমলা, সবুজ—ফাল্গুনে শুধু প্রকৃতি নয়, পোশাকেও এই রংগুলো যেন বেশিই ফুটে ওঠে। শিমুল-পলাশের ছোঁয়া লেগে যায় সাজে। হলুদ রঙের শাড়ি, মাথায় হলুদ ফুল—বসন্তের প্রথম দিনে এই সাজই বেশি দেখা যেত। তবে সময়ের সঙ্গে বদল এসেছে সাজ ও পোশাকে।
‘চুলে গাঁদা ফুল। হালকা সাজ। পরনে তাঁতের হলুদ শাড়ি, লাল পাড় কিংবা বাসন্তী রঙের শাড়িতে হলুদ পাড়। একসময় ফাল্গুনের সাজ বলতে এটাকেই বোঝাত।’ দেশালের ডিজাইনার ইসরাত জাহান ছোটবেলায় দেখা ফাল্গুনের সাজের বিবরণ দিলেন এভাবেই। এখনকার পোশাকের রঙে যে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে, সেটাও উল্লেখ করলেন তিনি। বললেন, ‘প্রকৃতির রংই এখন হলুদ। হলুদ রংগুলো বেশি ফোটে। নতুন কচি পাতা গজায় গাছগুলোতে। এ কারণেই এই রঙে সাজে মেয়েরা। তবে হলুদ রঙের সঙ্গে যায়—এমন অন্যান্য রঙের ব্যবহারও চলে এসেছে। বেগুনি রঙের শাড়িতে যখন হলুদ পাড় থাকে, গয়নাও যদি হলুদ হয়, তা হলে সেটা ফাল্গুনের সাজই হয়ে যায়।’ কচি পাতার সবুজ শাড়িতে হলুদ রঙের পাড়। ম্যাজেন্টা রঙের শাড়ির সঙ্গে হলুদ রঙের ব্যবহার, গাঢ় হলুদ, হালকা হলুদ, বাসন্তী, শর্ষে ফুলের হলুদ রঙা শাড়িও বেশ দেখা যাচ্ছে বাজারে। দেশাল রংগুলো বাছাই করে ঋতুর ওপর ভিত্তি করে। এবার বসন্তে পোশাকে নিয়ে এসেছে হলুদ, হালকা সবুজ, ফ্লোরাল মোটিভের নকশা।

এ ছাড়া ম্যাজেন্টার সঙ্গে কয়েক রকমের হলুদ রং ব্যবহার করা হয়েছে।ফাল্গুনের ফুলে হলুদ রঙের প্রাধান্য বেশি, কিন্তু অন্য রঙের ফুলও তো ফোটে। এ কারণে প্রকৃতির রংগুলোই যেন চলে আসে পোশাকে। সময়ের সঙ্গে মানিয়ে যায় বলে সুতির তৈরি পোশাকগুলোই বেশি আরামদায়ক হয়। দেশীয় কাটে তৈরি পোশাকগুলোর পাশাপাশি পাশ্চাত্য কাটে তৈরি পোশাকগুলোও অনেকে পরছেন। শাড়ি মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও কামিজ, স্কার্ট, কুর্তাতেও মন্দ লাগবে না সেদিন। আইকনিক ফ্যাশন গ্যারেজের স্বত্বাধিকারী তাসলিমা মলি বলেন, ‘বাসন্তী ও হলুদ রঙের মিশেল সব পোশাকে আনা হয়েছে। শীতের পরপরই বসন্তের আগমন তুলে ধরতে নকশায় ফুলেল নকশার পাশাপাশি প্রকৃতি থেকে বিভিন্ন নকশার মোটিফও ব্যবহার করেছি। স্কার্ট, টপ, কুর্তা, শাড়ি, মাটি পর্যন্ত ছোঁয়ানো গাউন, খাটো কামিজ বানিয়েছি আমরা।’
যাত্রার ডিজাইনার ঊর্মিলা শুক্লা ফাল্গুনের প্রথম দিনটিতে নিজের জন্য বেছে নেবেন সুতির শাড়ি। সাদা শাড়ির সঙ্গে কমলা রঙের ব্লাউজ অথবা কমলা শাড়ির সঙ্গে সবুজ রঙের ব্লাউজ বেছে নেবেন। গলায় পরবেন কাঠ-পুঁতি দিয়ে তৈরি মালা। এমনি উজ্জ্বল রঙে সেজে উঠতে পারেন আপনিও।
ঊর্মিলা শুক্লা বলেন, ‘সবাই এখন পোশাক-সচেতন, সবাই গুছিয়ে পরতে পছন্দ করেন। আমরা সিঙ্গেল জামার ওপর প্রাধান্য দিয়েছি। শাড়ি ও পোশাকে হলুদ, কমলা আর হালকা সবুজ বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। সাদার ওপর একটু হলুদের ছোঁয়াও দিয়েছি। টাইডাই, ব্লক ছাড়াও বাংলাদেশের সাতটি বিভাগের নকশি কাঁথার নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পোশাকে।’ফুলের ভেতরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে হলুদ রঙের ছোট আকারের পমপম, সাদা আর হলুদ রঙের চন্দ্রমল্লিকা বলে জানান শাহবাগের ফুল বিক্রেতা মো. আশরাফুল। তবে সাজে জিপসি ফুলও কিন্তু মন্দ লাগবে না। ভিন্নতা আনবে চুলে ডালিয়া ফুলের ব্যবহার। চাইলে ক্যালেন্ডোলা, গাঁদা, জারবারা, ওয়েস্টার ফুলের গয়না দিয়েও সাজতে পারেন।
মিউনিস ব্রাইডালের স্বত্বাধিকারী তানজিমা শারমীন বলেন, ‘এ সময় বেশ বাতাস থাকে। চুল একদম খোলা রেখে দিলে বেশি এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। ধুলাও আটকে যাবে চুলে। ফিশ টেইল, বিভিন্ন ধরনের বেণি, খোঁপা করা যেতে পারে। একটু গাঢ় রঙের ম্যাট লিপস্টিকের ব্যবহার এখন বেশি চলছে। জ্যামিতিক নকশায় চোখে আইলাইনার টানতে পারেন। আইশ্যাডোটা একটু চকচকে রঙের হতে পারে।’

উৎস: www.prothom-alo.com www.prothom-alo.com