”হেলথ টিপস” মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার উপায়

বিভিন্ন গবেষনার ফলে প্রমানিত হয়েছে, মানসিক চাপ হৃদযন্ত্রের ক্ষতি সাধন করে।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন

“ইয়োগা, ধ্যান  ইত্যাদি শরীরে দুশ্চিন্তা সৃষ্টিকারী হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে ফেলে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।”

একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা নিয়মিত ইয়োগা করেন তারা তুলনামূলক কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন। বিভিন্ন দুরারোগ্য শারীরিক সমস্যার মধ্যে  গা-ব্যথা অন্যতম। পরে যা থেকে হৃদরোগ সৃষ্টি করতে পারে।

এ সম্পর্কে ‘টেক্সাস এঅ্যান্ডএম হেল্থ সায়েন্স সেন্টার কলেজ অফ মেডিসিন’য়ের সহকারী অধ্যাপক জন সিমন্স জুনিয়র বলেন “নিয়মিত দিনের কিছু নির্দিষ্ট সময়ে অন্যসব ব্যস্ততার কথা ভুলে একান্ত মনে বিশ্রাম শরীরের জন্য ভালো ফল বয়ে আনে।”

বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান

সবসময় একাকী থাকা মানসিক স্বাস্থ্যে পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। এমনকি কখনও হৃদরোগ ধরা না পড়লেও ক্ষতির আশংকা থেকেই যায়।

একটি গবেষনায় দেখা গেছে মানসিক চাপ থেকে সাধারণত মহিলারা একধরনের কণ্ঠনালীর প্রদাহ, হৃদপিণ্ডসক্রান্ত বুকের ব্যাথা এবং অন্যান্য সমস্যায় ভোগেন। বিশেষ করে তারা যখন হার্ট-অ্যাটাকের পরে সময়টায় পরিবার বা সমাজ থেকে পর্যাপ্ত মানসিক সহায়তা পাননা।

তাই একাকী ঘরে বসে না থেকে আজই বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে পড়ুন। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।

“আপনার বন্ধুরা যদি স্বার্থপর হয় তবে অনেক বন্ধু থাকলেও তা খুব একটা উপকারী হবে না।”

নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিন

যারা সাধারনণত “টাইপ এ” চরিত্রের মানে সবসময় শুদ্ধ চরিত্রের অধিকারী হতে চান তারাই মূলত হৃদরোগে বেশি ভোগেন।

এ ধরনের অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিচরিত্রে শত্রুতার মনোভাব তৈরি করে।

“টাইপ এ চরিত্রের পেছনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। প্রকৃতপক্ষে এধরনের মনোভাব ব্যক্তিমনে অন্যদের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ তৈরি করে।”

গবেষনায় দেখা গেছে, শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব উচ্চ রক্তচাপ এবং মুটিয়ে যাওয়ার মূল কারণ যা পরে হৃদরোগ ডেকে আনে। তাই সবসময় ভালো চিন্তা করুন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। কেননা আশাবাদী মনোভাব আপনার হ্রদযন্ত্র রাখবে সুরক্ষিত এবং বিপদমুক্ত।

ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলুন

মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা করে রাখার অভ্যাস কখনোই হৃদযন্ত্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। গবেষনায় দেখা গিয়েছে ক্ষমা করার পরিবর্তে ক্ষোভ জমা করে রাখলে মানসিক চাপ বেড়ে যায় এবং সেই সঙ্গে হৃদ্ররোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ে।

“আপনি ভাবতেই পারবেন না মনের মধ্যে ক্ষোভ জমা থাকলে তা কত দ্রুত এবং দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ক্ষতি সাধন করে। তাই নিজের ঘাঁড় থেকে এই আপদ নামিয়ে মানসিকভাবে সুস্থ থাকুন সবসসময়।”

প্রাণ খুলে হাসুন

প্রাপ্তবয়স্ক কিছু মানুষকে নিয়মিত হাস্যকর এবং তুলনামুলক গম্ভীর চলচ্চিত্র দেখানোর পর গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন। আর নিয়মিত ক্যালরি পোড়ানোর মাধ্যমে স্থুলতার হাত থেকে বাঁচা যায় যা কিনা দীর্ঘ সময় ধরে হৃদযন্ত্র সুরক্ষিত রাখার ভালো একটি উপায়।

নিয়মিত আমোদ-প্রমোদ হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়।  হাসি ঠাট্টার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোঁটের কোণে সবসময় এক চিলতে হাসি রাখুন কিংবা পারলে মন খুলে হাসুন।

আপনি যত বেশি হাসবেন, তত বেশি ক্যালরি পুড়বে এবং হৃদযন্ত্র হবে শক্তিশালী।

অতিরিক্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন

অতিরিক্ত মদ্যপান দেহে ট্রাইগ্লিসারিনের এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং হৃদপিণ্ড অকার্যকর করে দিতে পারে।

অন্যদিকে নিয়ন্ত্রিত মদ্যপান বরং দেহকে হৃদরোগ থেকে দূরে রাখে। তবে এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত মদ্যপান বলতে পুরুষদের জন্য দিনে বড়জোর দু’গ্লাস এবং মহিলাদের জন্য দিনে খুব বেশি হলে এক গ্লাস বোঝায়।

যারা মদ পান করেন না তাদের জন্য এটা কখনোই মদ পান শুরু করার কারণ হতে পারে না। “তবে যদি এক গ্লাস ওয়াইন খাওয়ার নিশ্চয়তা চান তবে তা খেতে পারেন নিশ্চিন্তে।”

অতিরিক্ত আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন

তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারের প্রতি অতিরিক্ত আবেগী মনোভাব দূর করা উচিত।

উদাহরনস্বরূপ, গবেষকদের মতে প্রিয় ফুটবল দলের পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার হারও বেড়ে যায়।

তাই তুচ্ছ কারণে উত্তেজিত হবেন না। কারণ জীবনের মূল্য এর চেয়ে ঢের বেশি।

অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সাহায্য নিন

মানসিক অবসাদের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এবং আয়ু কমে যেতে পারে। অবসাদে ভুগলে মনোরোগবিদের পরামর্শ অনুযায়ী সাইকোথ্যারাপি নিন।

দ্য ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের মতে মানসিক অবসাদনাশক নানান রকম ওষুধ রয়েছে যা দেহে রক্তচাপ বাড়তে দেয় না। তবে এসব ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ব্যবহারবিধি জানতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম

বর্তমানে মানুষদের মধ্যে না ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সুস্থ থাকতে হলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম আবশ্যক। এক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে কতটা নিশ্চিন্তে ঘুমোনো গেলো তা বেশি গুরুত্বপূর্ন।

‘Sleep apnea’ এমন একটি অবস্থা যার ফলে ব্যক্তি নিঃশ্বাসে অসুবিধার কারণে ঘুম থেকে পর্যায়ক্রমে জেগে ওঠে। যারা এই সমস্যায় ভোগেন তাদের হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

যে ব্যক্তি রাতে পর্যাপ্ত ঘুমোতে পারেন তার ঘুমচক্র স্বাভাবিকভাবে পূর্ণ হয় না। আর রাতের বেলা স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ কম থাকে এবং শরীরে হরমোন কম উৎপন্ন হয়। যা থেকে হাইপারটেনশন এবং হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সূত্র ; bdnews24

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।