ল্যাসিক করানোর পূর্বে যে ১০টি বিষয় জেনে নেওয়া আপনার জরুরি

পূর্ণবয়স্ক মানুষের যাদের দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয় তাদের লেজার রশ্মির মাধ্যমে চোখের অপারেশন করিয়ে দৃষ্টিশক্তি ঠিক করার পদ্ধতিকে ল্যাসিক বলে। বিরক্তিকর চশমা ও কন্টাক্ট লেন্সের ঝামেলা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য অনেকেই ল্যাসিক করানোর চিন্তা করেন। কিন্তু আপনি কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে এর দ্বারা আপনি আপনার চোখের ক্ষতি করছেন না? আসুন জেনে নেই লেজার অপারেশন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়।
। নিজেকে জানুন
কেন আপনি এই অপারেশনটি করাতে চাইছেন সেই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। এই অপারেশনের ফলাফল নিয়ে আপনাকে সারাজীবন থাকতে হবে। তাই জেদ করবেন না। কারণ, এর কোনো গ্যারান্টি নেই। এমন অনেকেই আছেন যাদের ল্যাসিক করানোর পরও চশমা পরতে হচ্ছে।
২। আপনার সার্জনকে জানুন
একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ চক্ষুবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। ডাক্তারের সাথে তার অভিজ্ঞতা ও জটিলতার হার নিয়ে কথা বলুন। সার্জারির পরও তিনি আপনাকে দেখবেন কিনা বা অন্য কারো কাছে দায়িত্ব দিয়ে দিবেন কিনা সেই বিষয়ে নিশ্চিত হোন।


৩। আপনার চোখের ত্রুটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন
আপনার চশমার পাওয়ার যদি অনেক বেশি হয় তাহলে হয়ত আপনাকে ল্যাসিকের পুনরাবৃত্তি করাতে হতে পারে। যাকে রিফাইনমেন্ট বলে। আপনার ক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা কতটুকু তা ভালোভাবে জেনে নিন।
৪। আপনার চোখ লেজার অপারেশনের জন্য উপযুক্ত কিনা জেনে নিন
ল্যাসিক সবার জন্য না। যাদের চোখ মারাত্মক রকমের শুষ্ক, কর্নিয়ার সমস্যা আছে যাদের এবং চোখের অন্যকোনো সমস্যা আছে যাদের তাদের ল্যাসিক করানো উচিৎ নয়।
৫। অপারেশনের পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন
অপারেশনের সম্পূর্ণ পদ্ধতিটি সম্পর্কে আপনি ওয়াকিবহাল কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন। যদি এই সার্জারি সম্পর্কে সব কিছু জানেন তাহলে আপনার বিস্মিত হতে হবে না।
৬। মতভেদ সম্পর্কে জানুন
লেজার রিফ্রেক্টিভ সার্জারির পর বেশিরভাগ মানুষই উন্নত দৃষ্টিশক্তি উপভোগ করেন। তবে একেবারে নিখুঁত হবে এমন নয়। কেউই ২০/২০, ২০/২৫ বা ২০/৩০ ভিশনের গ্যারান্টি দিতে পারেননা। যদি কেউ এই ধরণের দাবি করে তাহলে অন্য একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
৭। ঝুঁকি সম্পর্কে জানুন
ল্যাসিক একটি বড় ধরণের সার্জারি, এটি কোনো ছোটখাট চোখের অপারেশন নয়। তাই বিভিন্ন রকম জটিলতা যেমন- ওভারকারেকশন, আন্ডারকারেকশন, কর্নিয়া ড্যামেজ, পিউপিল সরে যাওয়া, প্রদাহ বা ইনফেকশন হতে পারে। আপনি হয়তো শুনে থাকবেন যে জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা ২% বা ৫%। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে যদি জটিলতা দেখা দেয় তাহলে সেটাকে ১০০% ই মনে হবে।
৮। সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানুন
ক্ষীণদৃষ্টি ও বিষমদৃষ্টির সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ল্যাসিক। কিন্তু ল্যসিকের মাধ্যমে মধ্য বয়সে রিডিং গ্লাস ব্যবহার করা প্রতিরোধ করা যায়না। যাদের হালকা বা মাঝারি ধরণের মায়োপিয়া আছে তাদের ক্ষেত্রে চশমা বা কন্টাক লেন্স ব্যবহার ছাড়া ২০/৪০ বা এর চেয়ে ভালো দৃষ্টি আশা করতে পারেন ল্যাসিকের পরে। কেউ কেউ ২০/২০ ভিশন বা এরচেয়ে ভালো ভিশনও পেতে পারেন। মারাত্মক মায়োপিয়ায় যারা ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল অনিশ্চিত।
৯। অস্ত্রোপচারের পরের যত্ন সম্পর্কে জানুন
অস্ত্রোপচারের পরের ঔষধ কর্নিয়ার নিরাময়কে প্রভাবিত করে। আইড্রপের সঠিক ব্যবহার সঠিক ফলাফল লাভের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। তাই অপারেশনের পরের যত্ন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনার চিকিৎসকের সাথে কতবার দেখা করার প্রয়োজন হবে সেটাও আগেই জেনে নিন। সার্জারির পরের যেকোনো ধরণের সীমাবদ্ধতা যেমন- খেলাধুলা বা মেকআপ করা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিন।
১০। বিকল্প সম্পর্কেও জানুন
আপনার চক্ষু বিশেষজ্ঞকে এটা জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেননা যে, “এটাই কি আমার জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান”? LASIK, LASEK, PRK, INTACS এবং আরো অনেক উপায় আছে। একজন অভিজ্ঞ আই সার্জন একজন রোগীকে ৩-৪ টি উপায়ে চিকিৎসা করতে পারেন। কোনো উদ্ভাবনী গবেষণায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত সাবধানে গ্রহণ করুন। কারণ, এটি আপনার জন্য কঠিন অভিজ্ঞতা হতে পারে।
সাধারণত লেজার ভিশন কারেকশন খুব সাশ্রয়ীও নয় আবার খুব ব্যয়বহুলও নয়। তবে যদি জটিলতা দেখা দেয় তাহলে খরচ আরো বেড়ে যেতে পারে। তাই সার্জারি করানোর পূর্বে এই সব বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নিন।