ব্রাইডাল মেকআপ টিপস (Bridal makeup tips)

প্রত্যেক মেয়েই মানে হবু কনেরা চায় তার বিয়ের দিন(bridal makeup) তাকে সবচেয়ে সুন্দর দেখাক। তাই অনেক সময় হবু কনেরা দিনের পর দিন এমনকি মাসের পর মাস পারফেক্ট লেহেঙ্গা বা শাড়ি খুঁজতে সময় নেয়। কিন্তু বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন হবু কনের সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হল তাকে বিয়ের দিন কেমন দেখতে লাগবে, কেমন হবে তার লুক (bridal look) আর কে তাকে সাজাবে। তাই ব্রাইডাল মেকআপ সম্পর্কে আলোচনা করছি আমরা।

বিয়ের দিন ব্রাইডাল মেকআপ বা (bridal makeup) সাজগোজের ক্ষেত্রে জেন কোনও ভুলচুক না হয় সেটাই সব মেয়ে চায়। কোনও কনেই চায়না তার চোখের কাজল ধেবড়ে যাক বা ঠোঁটের লিপস্টিক খসখসে দেখাক (bridal look)। আমরা আপনার এই দুশ্চিন্তা খুব ভাল করে বুঝি আর তাই বিয়ের দিন কোনও অসুবিধা না হয় সেই বিষয়ে সমাধান (tips) নিয়ে হাজির হয়েছি। বিয়ের দিন ব্রাইডাল মেকআপের (bridal makeup) নানা টিপস (tips) থেকে শুরু করে মেকআপ আর্টিস্টকে (bridal makeup artist) আপনি কী কী প্রশ্ন করবেন, তার সমস্ত খুঁটিনাটি (tips) রয়েছে এই লেখায়। ধন্যবাদ চাইনা, আমরা শুধু চাই আপনার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনায় আপনাকে যেন সবচেয়ে সুন্দর দেখায়।

নিখুঁত বেস পাওয়ার জন্য দরকারি টিপস

১) স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন
বিয়ের দিন যাতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল দেখায় তার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনার মুখ হল একটা সাদা ক্যানভাসের মতো। সেখানেই মেকআপ আর্টিস্ট তার জাদু ফুটিয়ে তুলবেন। সুতরাং এই ক্যানভাস সামলে রাখার দায়িত্ব আপনার। দেখে নিন কীভাবে নেবেন বিয়ের আগে ত্বকের যত্ন।

ক) নিজের যত্ন নিন
আপনি যদি ভেবে থাকেন বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ত্বকের যত্ন নেওয়া যথেষ্ট তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।ছ’মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিন। ডার্মেটোলজিস্টের সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে তার সঙ্গে স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়ে কথা বলুন। তারপর যেটা আপনার ত্বকের উপযোগী সেটা করুন।

খ) প্রতিদিন এক্সফোলিয়েট করুন
এক্সফোলিয়েশান মানে হল ত্বকের মৃত কোষ তুলে ফেলা। নিয়মিত এক্সফোলিয়েশান করলে মৃত কোষ দূর হবে এবং ত্বক উজ্জ্বল হবে। তবে মনে রাখবেন সপ্তাহে দু তিন বারের বেশি এক্সফোলিয়েট করবেন না। কারণ বেশি এক্সফোলিয়েশান ত্বকের পক্ষে ক্ষতিকর।

গ) সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন
সূর্যের রশ্মি আমাদের ত্বকের কতটা ক্ষতি করে সেটা সহজে বোঝা যায় না। এর প্রভাব ধীরে ধীরে বোঝা যায় যখন ত্বক নির্জীব ও দাগছোপযুক্ত হয়ে পড়ে। তাই বাড়ি থেকে যখনই বেরবেন সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। এসপিএফ৩০ বা তার বেশি হলে ভালো হয়। শীতকালেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিৎ।

ঘ) যতটা পারুন চাপমুক্ত থাকুন
বিয়ের আগে যত পারেন স্পা, ফেসিয়াল, মাসাজ এসব করে নিজেকে খুশি রাখুন। চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। কারণ আপনার মন ফুরফুরে থাকলে তার প্রভাব আপনার ত্বকে পড়বে। বিয়ের দিন কী হবে এই ভেবে শুধু শুধু টেনশান নেবেন না।

ঙ) ভালো করে খাওয়া দাওয়া করুন
মনে রাখবেন আপনি যা খাবেন তার প্রভাব পড়বে আপনার ত্বকে। তাই বিয়ের আগে ভাজাভুজি না খেয়ে মায়ের হাতের ঘরোয়া রান্না খান। বেশি করে সবজি আর ফল খান। আর প্রতিদিন দু লিটার করে জল পান করতে ভুলবেন না।

চ) এক্সারসাইজ করুন
এক্সারসাইজ আমাদের হেলদি লাইফস্টাইলের একটি অংশ। তাই সপ্তাহে অন্তত পাঁচবার আধ ঘণ্টা করে এক্সারসাইজ করুন। আপনি যত ঘাম ঝরাবেন আপনার শরীর থেকে তত টক্সিন বা বিষ বেরিয়ে যাবে।

২) বেস যেন পরিষ্কার থাকে
মেকআপ শুরু করার আগে মুখে যত তেল ময়লা আছে সেগুল পরিষ্কার করে নিন। মুখ ধুয়ে শুকনো করে মুছে সেখানে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ড্রাই স্কিনে মেকআপ একদম বসে না তাই ত্বক আর্দ্র থাকা দরকার।

৩) সঠিকভাবে প্রাইমার ব্যবহার করুন
ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পরের পদক্ষেপ হল প্রাইমার লাগানো। প্রাইমার আপনার মুখে ফাউনডেশান ও কনসিলারের জন্য একটা স্মুদ (মাঝে মাঝে ওয়াটারপ্রুফ বেসও করে) বেস তৈরি করে জার জন্য মেকআপ আপনার মুখে দীর্ঘস্থায়ী হয়। একজন কনে হিসেবে প্রত্যেকেই চায় তার মেকআপ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা থাকুক তাই প্রাইমার ব্যবহার করা মাস্ট।

৪) ফাউনডেশান ভালো করে ব্লেন্ড করুন
একজন হবু জনের জন্য এক্তি গোল্ডেন রুল হল কখনও এসপিএফযুক্ত ফাউনডেশান ব্যবহার করবেন না। এতে আপনার মুখ বেশি চকচক করবে এবং ছবি বাজে উঠবে। মুখের কেন্দ্র থেকে শুরু করে ফাউনডেশান বাইরের দিকে লাগান, ঘাড়, গলা ও কানেও লাগান। আঙুল দিয়ে যদিও ফাউনডেশান লাগানো যায় তবু ভাল কভারেজের জন্য স্পঞ্জ বা ব্রাশ ব্যবহার করুন।

৫) মুখের খুঁত ঢাকতে কনসিলার ব্যবহার করুন
কনসিলার শুধু মুখের খুঁত, দাগ, ছোপ, ব্রণ বা মেচেতা ঢাকতেই কাজ দেয়না, এটি আপনার ত্বক উজ্জ্বলও করে। বাজারে এখন অনেক রঙের কনসিলার পাওয়া যায় যা বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহারযোগ্য। আপনি কি জানেন মুখের লাল ভাব ঢাকতে কাজে দেয় গ্রিন কনসিলার? কী দারুণ ব্যাপার তাই না?

৬) লুজ পাউডার ব্যবহার করুন
মুখের মেকআপ যাতে ভালো করে বসে তার জন্য মিহি এবং লুজ পাউডার ব্যবহার করুন। চোখের তলায় ও জ’লাইনে পাউডার লাগিয়ে নিন। খানিকক্ষণ রেখে ব্রাশ দিয়ে মুছে দিন।

৭) ডাইমেনশান আনতে কনটুরিং করুন
আমরা সবাই খোদাই করা, হাই চিকবোন, স্ট্রং জ’লাইন লুক খুব পছন্দ করি। কনটুরিংয়ের মাধ্যমে আপনি এইরকম লুক পেতে পারেন।গাল টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে নিন তারপর হেয়ারলাইন থেকে গালের মাঝ বরাবর পর্যন্ত ব্রোঞ্জার লাগান। গালের উঁচু অংশ ও জ’লাইনেও লাগান। ভালো করে ব্লেন্ড করে দিন।

৮) ত্বকে আনুন গোলাপের আভা
বিয়ের দিন কনের গালে যেন থাকে গোলাপের আভা। আপনার খুশি মনের ছোঁয়া যেন বোঝা যায়। তার জন্য প্রয়োজন ব্লাশার।ব্লাশ পাউডার নিয়ে ব্রাশ দিয়ে গালের উঁচু অংশে চক্রাকার মোশানে লাগিয়ে নিন।

৯) হীরের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠুন
ঝকমকে ও ঝলমলে দেখাতে আপনাকে আপনার মুখের হাই পয়েন্টস যেমন চিকবোন, কপালের মাঝখানে, ভুরুর উপরে ও মাঝখান হাইলাইট করুন।

১০) সব কিছু ঠিকঠাক গুছিয়ে নিন
সময়ের সাথে সাথে মেকআপ যাতে অতিরিক্ত চকচক না করে তার জন্য বেস মেকআপে কম্প্যাক্ট পাউডার লাগিয়ে নিন। ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার লাগালে ছবি ভালো ওঠে না তাই আপনার স্কিন টোনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাউডার বেছে নিন।

সঠিকভাবে চোখের মেকআপ কীভাবে করবেন

১) ভুরু শেপ করুন
চোখের মেকআপের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ভুরু কারণ এটা অনেকটা ফ্রেমের মতো। আইব্রো পেন্সিল দিয়ে ভুরুতে ঘষে নিন। চুলের যা রঙ তার থেকে এক শেড হাল্কা রঙ ব্যবহার করবেন।

২) ডার্ক সার্কল ঢেকে দিন
বিয়ের দিন চোখ যাতে বড় আর উজ্জ্বল দেখায় তার জন্য চোখের আশেপাশে সব ডার্ক সার্কল ঢেকে দিতে হবে। ক্রিমযুক্ত কারেক্টর ব্যবহার করুন। চোখের চারপাশের ত্বকে সমতা আসলে চোখ বড় দেখাবে।

৩) সামান্য শিমার যোগ করুন
আপনি যখন কনে তখন আপনার চোখের আকর্ষণ হবে সবচেয়ে বেশি। চোখে নাটকীয়তা আনতে শিমারি আইশ্যাডো চোখের ভিতরের কোনে লাগিয়ে নিন। হাইলাইটার দিয়েও এটা করতে পারেন। এতে চোখ বড় আর সুন্দর দেখাবে।

৪) ন্যুড শেড আইলাইনার ব্যবহার করুন
চোখ যাতে বড় দেখায় তার জন্য চোখের নিচের ল্যাশ লাইনে ন্যুড শেড আইলাইনার ব্যবহার করুন। এতে চোখ বড় আর সুন্দর দেখাবে।

৫) ক্রিজ বা চোখের কোন অবহেলা করবেন না
চোখের মেকআপ করার সময় চোখের কোল বা ক্রিজকে অবহেলা করবেন না। তাই হাল্কা শেডের আইশ্যাডো ব্যবহার হয়ে গেলে ব্রাউন বা অন্য কোনও ডার্ক শেড চোখের কোনে লাগিয়ে সেটা হাল্কা শেডের সঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে দিন।লাগবে।দেখবেন চোখ সুন্দর আর লাস্যময় লাগছে।

৬) চোখের নীচের পাতাতেও মাস্কারা দেবেন
আপনি নিশ্চয়ই এটা বিশ্বাস করেন চোখের নিচের পাতায় মাস্কারা দিলে বাজে লাগে। একদম না! চোখ সুন্দর দেখাতে চোখের নিচেও মাস্কারা দিন।

৭) চোখের পাতা কার্ল করুন
চোখের পাতা যাতে ঘন দেখায় তার জন্য মাস্কারা লাগানোর আগে চোখের পাতা কার্ল করে নিন।এতে চোখ বড় আর বোল্ড লাগবে।

৮) চোখের বাইরের দিকে মোটা করে কাজল/ আইলাইনার লাগান
চোখের মেকআপে এক্স ফ্যাক্টর যোগ করতে আইলাইনার বা কাজলের সঙ্গে ডার্ক কালারের আইশ্যাডো মিশিয়ে চোখের বাইরের কোনে লাগিয়ে নিন।

৯) চোখে আনুন বোল্ড লুক
বোল্ড লুকের জন্য আইলাইনার বা কাজল চোখের পাতার একদম ভিতরে লাগিয়ে নিন।সেটা যেন উপরের এবং নিচের চোখের পাতার ল্যাশ লাইনের খুব কাছাকাছি হয়। এই দুয়ের মধ্যে কোনও গ্যাপ না থাকলে চোখের পাতা আর বেশি প্রকট হবে ফলে বোল্ড লুক আসবে।

অন্যান্য মেকআপ টিপস যা মনে রাখা দরকার

১) ঠোঁটের যত্ন আগে থেকে নেবেন
ঠোঁটের পুরোপুরি যত্ন না নিয়ে লিপস্টিক লাগাবেন না। সবার আগে দরকার ঠোঁটের মৃত কোষ তুলে ফেলা। তার জন্য একটা ভেজা টুথ ব্রাশ নিয়ে খুব ধীরে ও হাল্কা করে ঠোঁটে বোলান। এরপর ঠোঁটে লিপবাম বা ভেসলিন লাগিয়ে নিন। একজন হবু কনের জন্য এটা মাস্ট।

২) সব সময় ঠোঁটে আউটলাইন করবেন
লিপলাইনার শুধু আপনার ঠোঁট সঠিকভাবে শেপ করে তা নয়, এটা কাজ করে ঠোঁটের প্রাইমার হিসেবে। লিপ লাইনিং পেন্সিল দিয়ে আপনি নিজের ইচ্ছে মতো সরু বা মোটা ঠোঁট এঁকে নিতে পারবেন।

৩) পোশাকের সঙ্গে মানানসই লিপস্টিক বেছে নিন
এমন লিপস্টিক বেছে নিন যা আপনার পোশাকের সঙ্গে মানানসই। বেশিরভাগ কোনে বিয়ের দিন লাল পরতে বেশি পছন্দ করেন। লাল শাড়ির সঙ্গে লাল লিপস্টিক দারুণ লাগে। ভালো লাগে ন্যুড শেডও। ভালো করে বুদ্ধি বিবেচনা করে লিপস্টিক বেছে নিন।

৪) লিপস্টিক যেন ঠোঁটে দীর্ঘক্ষণ থাকে
আপনি যদি ছান আপনার ঠোঁটে লিপস্টিক দীর্ঘস্থায়ী হোক তাহলে এই ট্রিক ট্রাই করুন।লিপস্টিকের প্রথম কোট দিন তারপর সামান্য পাউডার ঠোঁটের উপরে দিন। তারপর আবার এক কোট দিন। দেখবেন লিপস্টিক যে শুধু অনেক্ষন থাকবে তা নয় সেটা ঘেঁটে যাবে না।

৫) চুলের যত্ন নিন
বিয়ের দিন শুধু মেকআপ ঠিকঠাক থাকলে হবে না। তার সঙ্গে হেয়ারস্টাইল আর অ্যাকসেসরিও ঠিকঠাক হতে হবে। তার জন্য স্কিন কেয়ারের মতো আপনাকে হেয়ার কেয়ারও নিতে হবে যাতে বিয়ের দিন আপনার চুল রেশমের মতো নরম আর উজ্জ্বল থাকে।

৬) কীরকম হেয়ারস্টাইল করবেন সেটা আগে থেকে ভেবে নিন
যেভাবে আগে থেকে লুক নির্ধারিত করে রেখেছেন ঠিক সেভাবেই কীরকম হেয়ারস্টাইল করবেন সেটাও ভেবে রাখবেন। চুল খোলা রাখবেন নাকি খোঁপা বাঁধবেন সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন। চেষ্টা করুন নিজের মুখের শেপ অনুযায়ী হেয়ারস্টাইল করতে।

৭) ভালো হেয়ার স্প্রে ব্যবহার করুন
যে হেয়ারস্টাইলই আপনি বেছে নিন সেটা যেন ঠিকঠাক থাকে সেটাই আপনি চান। আর তাই একটি ভালো হেয়ার স্প্রে আপনার প্রয়োজন। হেয়ার স্প্রে দিলে চুল ঠিকঠাক থাকবে এবং ঘেঁটে যাবে না।

সূত্রঃ popxo

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।