মেয়েদের প্রচুর সাদাস্রাব-এর কারণ ও প্রতিকার !

মেয়েদের জন্য সাদাস্রাব খুবই সাধারণ একটি ব্যাপার। কিন্তু অতিরিক্ত এবং দুর্গন্ধ যুক্ত সাদাস্রাব খুব বিব্রতকর এবং জরায়ুর মুখে ইনফেকশন হওয়ার অন্যতম কারন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অতিরিক্ত এবং দুর্গন্ধ যুক্ত সাদাস্রাবকে লিউকরিয়া বলে। সাদাস্রাব হল যখন কোন মেয়ে অথবা নারীর জরায়ু থেকে ঘন সাদা অথবা হলুদ রঙ এর স্রাব নিগ্রত হয়। সাদাস্রাব খুব গুরুত্বপূর্ণ,আপনার যৌন স্বাস্থ্যের সমতা রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সাদাস্রাব এর মধ্যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন দেখা দিলে এটি ইনফেকশনের কারনও হতে পারে। স্বাভাবিক ভাবে ১৩-১৯ বছরের মেয়েদের, সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়ে শিশুর(এস্ট্রজেন হরমোন এর জন্য), প্রেগনেন্সির সময় স্বাভাবিক সাদাস্রাব হয়। অতিরিক্ত মাত্রায় সাদাস্রাব অনেক কারনেই হতে পারে। লিউকরিয়া আক্রান্ত নারীদের বিভিন্নও জনের বিভিন্নও রকম লক্ষন দেখা যায়। অনেকের আবার একসাথে অনেক গুলো লক্ষন দেখা দেয়।

অতিরিক্ত সাদাস্রাব-এর কারণ ও লক্ষন সমূহঃ

১) জরায়ুতে ব্যাকটেরিয়া জন্মালে। জরায়ু সব সময় ভেজা থাকে, তাই তাড়াতাড়ি ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধতে পারে।২) ছোঁয়াচে যৌন রোগ।৩) ইস্ট এর সংক্রামন ঘটলে।৪) অতিরিক্ত সাদা স্রাব-এ কোমরে ব্যথা করে।৫) গন্ধ যুক্ত সাদাস্রান নিঃসরণ।) তলপেট ভারি হয়ে থাকা৭) শরীর দুর্বল লাগা।৮) চোখের নিচ গর্ত হয়ে যাওয়া, চোখের নিচ কালো হয়ে যাওয়া।৯) বদ হজম।১০) জরায়ুতে চুলকানি অথবা জ্বালাপোড়া।১১) আন্ডার গার্মেন্টস এ দাগ লেগে থাকা।
১২) মুখের মলিনতা নষ্ট হয়ে যাওয়া।

সাদাস্রাব প্রতিরোধে করনীয়ঃ
১) কখনও অনেক সময়ের জন্য খালি পেটে থাকা যাবে না।২) খুব বেশি জরায়ু চুলকালে কুসুম গরম পানিতে লবন দিয়ে, জরায়ুর মুখ ভালো করে ধুতে হবে।৩) জরায়ুর মুখ সবসময় পরিষ্কার এবং শুকনো রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে জরায়ুর মুখ ভেজা থাকে বলেই বেশি ইনফেকশন হয়।৪) স্যানিটারি ন্যাপকিন ৫ ঘণ্টা অন্তর অন্তর বদলাতে হবে।

সাদাস্রাব এর জন্য ডায়েটঃ
১) প্রতিদিন ২ চামচ টক দই খান।২) ভাজাপোড়া খাওয়া একদমই বাদ দিতে হবে।৩) অ্যালার্জি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

জীবন যাত্রায় পরিবর্তনঃ
১) রাতে কম পক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।২) রাত জাগা যাবে না।৩) ফাস্ট ফুড পরিহার করতে হবে।

সাদা স্রাব নিরাময়ে ঘরোয়া পদ্ধতিঃ
১) এলাচি দানা মেয়েদের জন্য খুব উপকারি। প্রতিদিন এলাচি খেলে শরীরে হরমোনের সমতা থাকে। সাদাস্রাব এর জন্য প্রতিদিন রাতে একটি গ্লাসে ৪/৫ টা এলাচি দানা দিয়ে রাখবেন। সকালে উঠে পানিটা খেয়ে ফেলবেন অথবা হারবাল চা-তে এলাচি দানা ব্যবহার করতে পারেন।

২) জরায়ুর মুখ ধোয়ার সময় ৫ চামচ ভিনেগার অথবা অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার এবং ১ চামচ লবন পানিতে মিশিয়ে ধুবেন, আরাম পাবেন।

৩) প্রতিদিন ১/২ কোয়া রসুন খেলে সাদাস্রাব কমবে।

৪) আধা চামচ বেকিং সোডা পানিতে গুলিয়ে জরায়ুর মুখ ভালো ভাবে ধুলে সাদাস্রাব কমবে।

সাদাস্রাব খুব বেশি আকার ধারন করলে ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হবে। জরায়ুর মুখ পরিষ্কার এবং শুকনো রাখলে, ইনফেকশন হওয়ার হার অনেক কমে যায়।

জেনে নিন সাদা স্রাব কমানোর কিছু ঘরোয়া নিয়ম

প্রথমেই বলি সাদা স্রাব মানেই খারাপ নয়। নাক দিয়ে সর্দি পড়ার মতো শরীরের যে কোনও অংশ থেকে সিক্রেশন হতে পারে। তেমনই জরায়ুমুখ বা সার্ভিক্স থেকেও এক রকম সিক্রেশন হয়। একদম জলের মতো। কোনও দুর্গন্ধ থাকে না। সাধারণত দুটো পিরিয়ডের মাঝে ওভ্যুলেশনের সময় এই রকম তরল ডিসচার্জ হতে পারে। এটি স্বাভাবিক ব্যাপার। এতে শরীরি মেলামেশায় অসুবিধা হয়।

কিন্তু জলের মতো না হয়ে অন্য কোনও রঙের স্রাব বেরোলে চিকিৎসার কথা ভাবতে হবে। কারণ জননঅঙ্গের ইনফেকশনের জন্য এরকম স্রাব বেরোয়। একে বলে পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিস বা পিআইডি।

কী ভাবে হয় এই ইনফেকশন : যৌন মেশামেশি থেকে হয়। শরীরী মেলামেশার সময় স্বামীর থেকে স্ত্রীর বা স্ত্রীর থেকে স্বামীর ইনফেকশন হতে পারে। অন্য যে কোনও অপারেশনের মতো স্ত্রীরোগের যে কোনও অপারেশনের পর ইনফেকশন হতে পারে। এমনকি গর্ভপাত করালেও বা প্রসবের পরও ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে।কী ভাবে বুঝবেন এই সমস্যা হয়েছে :
১. দুর্গন্ধযুক্ত সাদা, হলুদ, খয়েরি বা সবুজ রঙের স্রাব বেরলে।২. চুলকানি হলে।৩. তলপেটে অসম্ভব ব্যথা হলে।৪. শারীরিক মেলামেশার সময়ে গোপনাঙ্গে ব্যথা হলে।৫. দুই পিরিয়ডের মাঝখানে ইন্টারকোর্সের সময়ে রক্তপাত হলে।৬. শরীরে সব মিলিয়ে একটা ভাল না-লাগার অনুভূতি হলে।৭. জ্বরও আসতে পারে।

কমানোর কিছু ঘরোয়া সমাধানঃ

১। আমলকী- তিন গ্রাম আমলকী গুঁড়োর সঙ্গে ছয় গ্রাম মধু এক সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। অথবা ২০ গ্রাম আমলকী রসের সঙ্গে আধ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন। টানা এক মাস দিনে দু’বার করে এই মিশ্রণ খেলে উপকার পাবেন।

২। কলা- রোজ সকালে এক কাপের দুধের মধ্যে এক চমচ মধু মিশিয়ে খান। সঙ্গে একটা কলা। কাঁচকলা সেদ্ধ বা যে কোনও রান্নায় কাঁচকলা দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন। দুটো পাকা কলার সঙ্গে তিন টেবিল চামচ মধুর মিশ্রণ বানিয়ে নিন। এই মিশ্রণ দিনে দুই থেকে তিন বার খেলেও কমবে হোয়াইট ডিসচার্জ।

৩। বেদানা- রস করেই খান বা চিবিয়ে খান, বেদানা দারুণ উপকারী। শুধু ফল নয়। বেদানা পাতাও উপকারী। ৩০টা বেদানা পাতার সঙ্গে গোটা গোলমরিচ মিশিয়ে জলে মেশান। ছেঁকে নিন। টানা তিন সপ্তাহ সকালে এই জল খেলে উপকার পাবেন।

৪। শুকনো আদা গুঁড়ো- দুই চা চামচ শুকনো আদা গুঁড়ো ২৫০ মিলি জলে ফুটিয়ে নিন। যত ক্ষণ না জল ঘন হয়ে অর্ধেক হয়ে যায়। টানা তিন সপ্তাহ আদা জল খেলে উপকার পাবেন।

৫। তুলসি- মধু ও তুলসি পাতার রস এক সঙ্গে মিশিয়ে রোজ সকাল-বিকেল টানা দু’সপ্তাহ খান। এক চা চামচ তুলসি পাতার রস, জিরে গুঁড়ো, দুধের দুধে মিশিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে খান। মিছরির সঙ্গে তুলসি পাতার রস খেলেও উপকার পাবেন।

৬। ফিটকিরি- তুলসির মতোই ভাল অ্যান্টিসেপটিক ফটকিরি। সিকি চামচ ফটকিরি গুঁড়ো জলে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেলে ভ্যাজাইনাল ডিসচার্জ কমে যাবে।

৭। ঢেঁড়স- এক লিটার জলের মধ্যে ২০০ গ্রাম ঢেঁড়স সেদ্ধ করুন। জল ঘন হয়ে অর্ধেক হয়ে আসবে। টানা এক সপ্তাহ দিনে দুই থেকে তিন বার এই জল খান।

৮। ভাতের ফ্যান– ভাতের ফ্যান নিয়মিত খেলেও কমে যায় হোয়াইট ডিসচার্জ। ফ্যান ভাত খেতে পারেন রোজ। তবে এতে কিন্তু ওজন বাড়ে।

৯। মেথি- এক চামচ মেথি জলে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে জল ছেঁকে এর মধ্যে আধ চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে নিন।

১০। পেয়ারা- এক লিটার জলে কয়েকটা পেয়ারা পাতা ফুটিয়ে জল অর্ধেক করে নিন। ছেঁকে নিন। এই জল দিনে দু’বার খেলে শুধু হোয়াইট ডিসচার্জ নয়, অনেক ইনফেকশনও কমে যাবে।

সুত্রঃ radiobangla365

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।