আপনার শিশু কি টিভি আসক্ত!

শিশুদের বিনোদন এখন শুধু টিভি আর কম্পিউটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কারণ নাগরিক জীবনে খেলাধুলার কোনো সুযোগ আধুনিক মানুষ তাদের জন্য রাখে নি। ঘরের সামনে নেই কোনো উঠান। পাড়ায় নেই কোনো খেলার মাঠ। এমনকি এখনকার স্কুলগুলোতেও তাদের জন্য কোনো মাঠের ব্যবস্থা নেই। আর তাই বাচ্চারা ঝুঁকে পড়ছে টিভি দেখার প্রতি। টম অ্যান্ড জেরি, স্পাইডারম্যান, ডোরেমনের মতো কার্টুনগুলোই এখন তাদের শেষ ভরসা। টিভি দেখা নিয়ে সমস্যা নেই। বেঁচে থাকার জন্য বিনোদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তা ছাড়া ঘরবন্দি জীবনে টিভি না দেখে শিশুরা করবেটাই বা কী।

টিভিতে শিক্ষণীয় অনেক বিষয়ও দেখায়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, অ্যানিমাল প্ল্যানেট, ট্র্যাভেল চ্যানেলসহ বিভিন্ন চ্যানেলে এমন অনেক বিষয় দেখানো হয় যা তাদের মানসিক বিকাশ, তাদের চিন্তা-ভাবনা প্রসারের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই বলে সারাক্ষণই টিভি দেখলে পরিণাম খারাপ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। কারণ অতিরিক্ত টিভি দেখার ফলে শিশুদের কল্পনাশক্তি কমে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। টিভিতে মারামারির এবং কূটকাচালির অনুষ্ঠান দেখে সেগুলো অনেকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে চায়, যা শিশুদের সুস্থ বিকাশের প্রতিবন্ধকতা।

টিভি দেখা নেশায় পরিণত হওয়ার কারণে অনেক সময় অনেক শিশু নিজেদের শখের কাজটি পর্যন্ত করতে চায় না। টিভির নেশায় বুঁদ হয়ে শিশু অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলে, যা তার শরীরের জন্য খুব ক্ষতিকর। শিশুরা টিভি দেখুক, কিন্তু তা যেন কোনো অবস্থাতেই নেশায় পরিণত হয়ে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্য অভিভাবকদেরই সচেতন থাকতে হবে। অধিক পরিমাণে টিভি দেখার কারণে শিশুর অনেক ক্ষতি হতে পারে।

 

কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানান, অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখার ফলে শিশুরা দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছে। ফলে পরবর্তী সময়ে তারা মারাত্মক রোগের শিকারও হতে পারে। আজকাল বেশিরভাগ শিশু খেলার মাঠ ছেড়ে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেটে। ফলে শারীরিক সক্ষমতার দিক দিয়ে তারা দুর্বল হয়ে পড়ছে। আধুনিক সভ্যতার বদৌলতে বিশ্বটা আজ হাতের মুঠোয় কয়েকটি বোতামে আবদ্ধ হয়েছে ঠিকই; কিন্তু জীবনকে হুমকির মুখোমুখি করেছে অনেক ক্ষেত্রেই। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কিছু উপায় নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
একনাগাড়ে টেলিভিশন দেখা ও সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবার গ্রহণ অতিরিক্ত মেদের সৃষ্টি করে। দেখা যায়, অনুষ্ঠানের আকর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে মুখরোচক খাবারে আসক্তিও চলে আসে, আর এখান থেকে হাতছানি দেয়া শুরু হয় প্রাণঘাতী রোগের। যেমন রক্তে ফ্যাট, হাইপারটেনশন, হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস প্রভৃতি। গবেষকরা ১২ থেকে ১৯ বছরের ৭ হাজার ৯৮২ শিশুর ওপর গবেষণা চালান অতিমাত্রায় টেলিভিশন দেখার শারীরিক সমস্যা সম্পর্কে। এছাড়া ভিডিও গেমসহ এজাতীয় অন্যান্য গেম শিশুর মস্তিষ্কের বিশেষ একটি অংশকে উত্তেজিত করে।

এক্ষেত্রে সমাধান হচ্ছে:

১.বাচ্চাদের টেলিভিশন দেখার নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া।
২.তাদের পছন্দের অনুষ্ঠানগুলোর তালিকা তৈরি করে প্রিয় কয়েকটি অনুষ্ঠান দেখতে দেয়া।
৩.টেলিভিশন দেখার সময় ফ্যাট জাতীয় খাবার খেতে নিষেধ করা।

টেলিভিশন দেখতে কেনা ভালোবাসে? সারা দিনের ব্যস্ত শিডিউলের পর বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ টিভি চ্যানেল সার্চ করতে অথবা পছন্দের নিউজ চ্যানেলে পুরো দিন কোথায় কী হয়েছে এক ঝলক দেখে নেয়া, কিংবা পছন্দের গানের শো দেখতে আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই ভালো লাগে। তাহলে সমস্যাটা কোথায়? টিভি তো সবাই দেখেন। সমস্যা হলো অতিরিক্ত সময় টিভি দেখা। কীভাবে বোঝা যাবে, কেউ টিভি দেখায় অ্যাডিকটেড হয়ে পড়েছেন। যদি একটানা দেড় থেকে ২ ঘণ্টারও বেশি কেউ টিভি দেখেন, তাহলে বুঝতে হবে তিনি টেলিভিশনে অ্যাডিকটেড হয়ে পড়েছেন। অনেক সময় দেখা যায়, মা-বাবা টেলিভিশন ‘বেবি সিটার’ হিসেবে ব্যবহার করেন। বাচ্চাকে খাওয়ানোর সময় বা নিজে কাজ করার সময় যাতে বাচ্চা তাদের বিরক্ত না করে তার জন্য বাচ্চাকে টিভি দেখতে বসিয়ে দেন। ফলে আস্তে আস্তে তারা টিভি দেখায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এখন বেশিরভাগ বাচ্চার মধ্যেই টেলিভিশনে বিভিন্ন ধরনের কার্টুন চ্যানেল দেখার প্রবণতা বেড়ে গেছে। ফলে তারা ধীরে ধীরে সেসব কার্টুন চরিত্রের মতো নিজেদের তৈরি করার চেষ্টা করছে। এ অভ্যাস তাদের জন্য খুব ক্ষতিকর। শুধু বাচ্চা নয়, বড়দের মধ্যেও অত্যধিক টেলিভিশন দেখার প্রবণতা দেখা যায়। বেশিক্ষণ টিভি দেখার অনেক সাইড এফেক্ট রয়েছে।

শিশু ও কিশোরদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট কায়িক পরিশ্রম করা উচিত। পরিশ্রমের পরিমাণ যত বাড়বে, জীবনমানের প্রত্যাশাও তত বাড়বে এবং কমে যাবে নানা ধরনের রোগের ঝুঁকি।

লেখাটি পছন্দ হলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।