শিশু জন্মের পর মা বা পরিবারের লোকজন তার যত্নআত্তি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। দুধ খাওয়ানো, গোসল করানো, পায়খানা-প্রস্রাব ঠিকমতো হলো কি না—এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন এসে ভিড় করে তাদের মনের ভেতর।নবজাতকের পরিচর্যা প্রত্যেক মায়ের জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যাঁরা নতুন মা হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে।

—–একটি বাচ্চা প্রসবের পর মায়ের খুব চিন্তা হয় বাচ্চা কী খাবে? খাওয়ার বিষয়টি প্রথমে বলতে চাই। প্রথমেই মায়ের শাল দুধ বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। বাচ্চাকে ঘন ঘন দুধ খাওয়ালে খুব দ্রুত মায়ের দুধের উৎপাদন বাড়বে।২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ তেমনভাবে উৎপাদন হয় না। দুধ সেভাবে আসে না। তখনই আমাদের দেশে যে বিষয়টি হয়, বাইরের দুধ খাইয়ে দেওয়া হয়। সে জন্য যেটা প্রয়োজন, সঠিক নিয়মে বারবার মায়ের দুধ যদি টানানো যায়, তাহলে দুধ আসবে। সে ক্ষেত্রে মায়ের মস্তিষ্কে একটি সংকেত যাবে দুধ তৈরি করার জন্য। প্রথমে এই সংকেত থাকে না। শিশু যখন দুধ চোষে, সে সময় মস্তিষ্কে সংকেত যায় এবং দুধ তৈরি হয়।

—-শাল দুধে প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম ।এই শাল দুধ কখন আসবে এবং দেখে কীভাবে বোঝা যাবে এটি শাল দুধ?শাল দুধ একটু হলুদ রঙের থাকবে, ঘন হবে। সেটিই প্রথম খাওয়াতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাল দুধ আসতে থাকবে। পরে দেখা যাবে সাদা দুধটি চলে আসছে।ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে শিশুর যে বন্ধন রয়েছে, এটিও ভালো হবে। এ ছাড়া জীবাণু থেকে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা শিশু মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে পেয়ে থাকে।

—–নবজাতকের গোসলের বিষয়টি নিয়ে অনেকে খুবই উদ্বিগ্ন থাকেন, আসলে কখন গোসল করানো উচিত এবং কীভাবে করাতে হবে? আসলে নাভিটি পড়তে সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। বলা হয়, নাভিটা শুষ্ক রাখাই ভালো। তখন গোসল না করিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে। আমরা বলি, কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সারা শরীর মুছিয়ে দেবেন। নাভির অংশটি যেন শুষ্ক থাকে, সেদিকে খেয়াল করতে হবে। এর পর যখন নাভি পড়ে যাবে, তখন দেড় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে সপ্তাহে দুদিন গোসল করাবে। প্রতিদিন করানোর প্রয়োজন নেই। তিন দিন পরপর একদিন গোসল করবে। আর বাকি দিনগুলোতে গা মুছিয়ে দিতে হবে। শিশুকে অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। বাজারে যে বেবি শ্যাম্পু বা সাবান পাওয়া যায়, সেটি দিয়ে তাকে গোসল দিতে হবে।

—–শিশুকে সরিষার তেল বারবার দেওয়া খুব কি যৌক্তিক?আসলে সরিষার তেল দিতে আমরা নিষেধ করি। কারণ, এটি খুব পুরু থাকে। এর জন্য র‍্যাশ হয়। বাচ্চার শরীর ময়লা হয়ে যায়। সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরিষার তেলের ঝাঁজ বেশি। আমরা সাধারণত বলি, সরিষার তেল না দেওয়াই ভালো। যদি বেবি অয়েল দিই বা অলিভ অয়েল দিই, সেটা দেওয়া যাবে। তবে সেটাও দেড় মাসের পরে।

—-নবজাতকের নাভির পরিচর্যার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে জোর দেওয়া দরকার?নাভি শুষ্ক রাখতে হবে। নাভি ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে যাবে। আগে বলা হতো, স্যাভলন বা অ্যান্টিস্যাপটিক এগুলো ব্যবহারের জন্য। তবে এখন বলা হয়, কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি কোনো কারণে নাভির চারদিকে লাল হয়ে যায়, নাভি ফুলে যায় তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আরেকটি স্বাভাবিক বিষয় হলো, অনেক শিশুর নাভি ফোলা থাকে, তখন মায়েরা চিন্তায় পড়ে যান। নাভি কেন ফুলে যাচ্ছে? এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এক বছর বয়স হতে হতে বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

—-বিলুরুবিনটা কত বেশি হলে সেটি চিন্তার বিষয়?সব শিশুরই জন্ডিস হবে, তবে সেটি কম আর বেশি। দেখা যায়, তিন থেকে চার দিনে জন্ডিস বাড়ে। আবার ছয়-সাত দিনে কমে যায়। সেসব শিশুর এর পরও না কমে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হলে ফটোলাইট দিয়ে চিকিৎসা করি। এর বেশি হলে অনেক সময় রক্ত পাল্টানোর মতো পরিস্থিতি হয়।

বে সাদা দুধটি চলে আসছে।

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।