”শিশুর যত্ন” কিভাবে সামলাবেন বাচ্চার জেদ?

কিভাবে সামলাবেন বাচ্চার জেদ?

বাচ্চার জেদ সামলানোর প্রাথমিক উপায় নিজেদের মনকে শান্ত রাখা। তার জন্য দরকার উপযুক্ত প্ল্যানিং। প্রথম থেকেই যদি ওদের জেদ জনিত ব্যবহারে লাগাম দেওয়া যায়, বাচ্চাদের চারিত্রিক কাঠামোর অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় গোড়ার থেকেই।

১। যখনই বাচ্চারা জেদ করা শুরু করবে মা বাবা ও পরিবারের সবাইকে খুব শান্ত ও সংঘবদ্ধ থাকতে হবে। যদি বাড়ীর লোকের মধ্যে মতের অমিল হয় তার জেদের কারণ নিয়ে, তবুও কোনোভাবেই বাচ্চার সামনে তা প্রকাশ করা চলবেনা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বাড়ীর গুরুজনেরা ওদের এই জেদের অভিব্যক্তি মেনে নিতে পারেন না এবং স্নেহবশত: তাদের দাবী করা জিনিসটি তাঁরা দিয়ে দেন। এটা একেবারেই ভুল পদক্ষেপ। বাচ্চারা খুব সহজেই পরিবারের মেরুকরন বুঝতে পারে এবং সেই পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে।

২। বাড়ীর মধ্যে জেদের সুত্রপাত হলে বাচ্চাকে কিছু খেলনা দিয়ে আলাদা করে বসিয়ে রাখুন।লক্ষ্য রাখবেন জায়গাটি যেন সুরক্ষিত থাকে কারণ এই সময় বাচ্চারা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় থাকে। নিজেরা শান্ত ও গম্ভীর থাকুন। খুব প্রয়োজনভিত্তিক কথা ছাড়া কোনোভাবেই কোনো অতিরিক্ত কথা বলবেন না। মারধোর বা বকাবকি করাও একদম নয় এই সময়ে। এই সময়ে কোনোভাবেই বাচ্চার সাথে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবেন না। বাচ্চার ব্যবহারকে কোনোরকম গুরুত্ব দেবার চেষ্টাও করবেন না। অ্যাটেনশন না পেলে ওদের মধ্যে শান্ত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে ট্যানট্রাম সাবসাইডিং।

৩। ধীরে ধীরে ট্যানট্রাম বা জেদ যখন কমে আসে সেই সময়টা পেরেন্টিং র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। সেই সময় বাচ্চাকে স্নেহের সাথে বোঝাতে হবে সে যা ব্যবহার করছে তা পরিবারের কারোর কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। যদি সে আবার ওরকম ব্যবহার করে আবার তাকে বাড়ীর সবার নির্লিপ্ত ব্যবহার পেতে হবে। তার নিজস্ব চাহিদা নিশ্চয় থাকতে পারে, কিন্তু তা প্রকাশ করতে হবে সংযতভাবে। এইভাবে তার মধ্যে সেল্ফ কন্ট্রোল বোধ তৈরী হবে।

৪। বাড়ীর বাইরে বাচ্চারা অনেকসময় জেদের বহি:প্রকাশ ঘটায়। এখনকার বাচ্চাদের গন্তব্যস্থল বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় শপিং মল। সেখানে সার সার সুন্দর করে সাজানো খেলনাপাতির সামনে নি:সন্দেহে তাদের চাহিদার পরিমান হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। ফলে উদ্দিষ্ট জিনিসটি পাওয়ার জন্য ট্যানট্রাম শুরু করে তারা। এক্ষেত্রে দুটি সমাধান আছে। প্রথমত: শপিং মল জাতীয় জায়গায় বাচ্চাদের যতটা কম নিয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো। বাচ্চাদের রিক্রিয়েশন খেলার মাঠ হতে পারে কিন্তু শপিং মল নয়। যদি একান্তই নিয়ে যেতে হয় বাড়ীতে তাকে বার বার কাউন্সেলিং করে নিয়ে যাওয়া উচিত।

৫। যেসব মায়েরা কর্মরত তাদের অনেকসময় একটা অকারণ অপরাধবোধ কাজ করে। তাদের সবসময়ই মনে হয়, বাচ্চাকে সে অযত্ন করছে। তাই কাজ থেকে বাড়ী ফেরার সময় প্রায়ই বাচ্চাদের জন্য চকোলেট, চিপস বা খেলনাপাতি নিয়ে বাড়ীতে ঢোকেন। এতে স্বভাবতই বাচ্চার মনে চাহিদার মাত্রা বাড়ে। এই ধরণের ‘পেরেন্টিং ব্রাইবিং’ বাচ্চাদের জেদ বা ট্যানট্রামের অন্যতম কারণ।

বাচ্চাকে সহজভাবে বোঝান আপনার বাইরে কাজ করাটা প্রয়োজন। বাচ্চার এক্সপেক্টেশন ম্যানেজ করুন যতটা সম্ভব। দেখবেন ও অনেক সহজভাবে বড় হচ্ছে। বাড়ী ফিরতে দেরী হলে চকোলেট নিয়ে বাড়ীতে আসার প্রয়োজন নেই বরং ফিরতে ফিরতে ফোনে ওর সাথে প্ল্যান করে ঠিক করুন আজ রাত্তিরে কি গল্প বলবেন ওকে। দেখবেন জেদ উধাও হয়ে অনেক বেশী উৎসুকভাবে ও অপেক্ষা করছে আপনার।

৬। বাচ্চার মধ্যে জেদ সংবরণের প্রবণতা দেখলে প্রশংসা করুন। আপনার প্রশংসা আপনার বাচ্চাকে উৎসাহিত করবে সেল্ফ কন্ট্রোল শেখাতে।
বাচ্চার জেদ বা ট্যানট্রাম সামলানোর জন্য মারধোর বা বকাবকির প্রয়োজন হয়না। দরকার কেবল আপনার ধৈর্য বা পেশেন্স, উপযুক্ত প্ল্যানিং, বাড়ীর সব সদস্যদের বাচ্চাদের প্রতি একই ধরণের ব্যবহার আর পজিটিভ বা অথরিটেটিভ পেরেন্টিং পদ্ধতি।

সূত্র ; Facebook

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।