নবজাতকের গোসল

নবজাতকের গোসলেরও আছে অনেক নিয়ম-কানুন। এসব জেনেই নবজাতককে গোসল করানো উচিত। আর গোসল নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা আছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন ঢাকা শিশু-নবজাতক ও জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. খালেদ নূর

# জন্মের পরপরই নবজাতকের শরীরের ময়লা পরিষ্কার করে ফেলা হয়। তাই জন্মের পরই গোসল করানোর দরকার নেই। কিন্তু অনেকে গোসল করানোর জন্য অস্থির হয়ে পড়েন। আবার অনেকে মনে করেন চুল কাটা কিংবা নাভি পড়ার
পর গোসল করানো উত্তম। আসলে জন্মের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর গোসল করানো উচিত। সবচেয়ে ভালো নবজাতকের নাভি শুকানোর আগে পরিপূর্ণ গোসল থেকে বিরত থাকা। তবে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি। এ ক্ষেত্রে
নরম কাপড় কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে তা দিয়ে শরীর মুছে দেওয়া, মলত্যাগ ও প্রস্রাবের পর শিশুকে ভালোভাবে পরিষ্কার করা দরকার।

# গোসল করানোর আগে খেয়াল রাখতে হবে ঘর বা বাথরুমের তাপমাত্রা যেন স্বাভাবিক থাকে। যিনি গোসল করাবেন তাঁর হাত ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। আগে থেকেই বাথটাবে কুসুম গরম পানি তৈরি রাখুন। বাথটাবে এমনভাবে পানি
দিন, যাতে ভেতরের পানি বাথটাবের মেঝের উচ্চতা থেকে এক বা দুই ইঞ্চি কম হয়। নবজাতকের গোসলে কখনোই স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করবেন না। কুসুম গরম পানিই উত্তম। এতে বাচ্চার ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা
থাকে না। অনেকে গোসলের পানিতে সামান্য ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে থাকেন। অনেকে আবার বাড়তি সতর্কতা হিসেবে ব্যবহার করেন নিমপাতা। আসল ব্যাপারটি হলো, পানি হতে হবে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার।

# শিশুর গা মোছানো ছাড়াও ভেজা শরীর ধরার জন্য বাড়তি কাপড় বা তোয়ালে ও পরিধেয় কাপড় সঙ্গে রাখুন। গোসলের আগে কাপড় খুলে মলমূত্র থাকলে তা পরিষ্কার করে তারপর শিশুকে বাথটাবে নামাতে হবে। প্রথমে শিশুর মাথা ও
ঘাড় এক হাতের ওপর রেখে ধীরে ধীরে শরীরের পেছনের অংশ বাথটাবে রাখুন।

# নাভি যাতে না ভেজে সেদিকে বাড়তি খেয়াল রাখা চাই। গোসল আরামদায়ক করার জন্য আলতো করে হালকা গরম পানি শরীরের ওপর হাত দিয়ে আস্তে আস্তে দিন, যাতে সে ঠাণ্ডা অনুভব না করে। হঠাৎ করে গায়ে পানি দিতে যাবেন
না। বাচ্চাকে কিছুটা সময় দিন পানির সঙ্গে মানিয়ে নিতে। অনেক নবজাতকই এ সময় কেঁদে ওঠে। বেশি কান্না করলে পানি থেকে উঠিয়ে নিন। গোসলের সময় শিশুর কান, বগল, কুঁচকি, কানের পেছনটা নরম কাপড় দিয়ে আলতো
করে ঘষে দিন। মাথার ময়লাগুলো আলতো করে ঘষে পরিষ্কার করে ফেলুন। খেয়াল রাখবেন নাকে-কানে যেন পানি না ঢোকে। চার-পাঁচ মিনিটে গোসলের পর্ব শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে শরীর মুছে কাপড় পরিয়ে দিতে হবে।

# নবজাতকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কম ক্ষারযুক্ত সাবান, শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। সাবান কেনার সময় তার পিএইচ লেভেল দেখে নিন। এই লেভেল সাতের নিচে থাকলেই ভালো। অনেকে গোসলের আগে বাচ্চার শরীরে সরিষা তেল দিয়ে
ম্যাসাজ করেন। তেল মাখলে শিশুর ত্বক ভালো থাকবে বা হাড় শক্ত হবে—এটা ভুল। গরমে বাচ্চার মাথায় ও ত্বকে তেল মাখবেন না। এতে শিশুর লোমকূপ বন্ধ হয়ে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। গোসলের পুরো প্রক্রিয়ায় নিরবচ্ছিন্ন
মনোযোগ প্রয়োজন। প্রয়োজনে বাড়তি কারো সাহায্য নিন।

জেনে রাখুন

গোসলের জন্য একটি বাথটাব, মোছার জন্য কয়েকটি সুতি নরম কাপড়, তুলার প্যাড, শিশুদের জন্য তৈরি সাবান, একটি তোয়ালে, জামা ও ডায়াপার সঙ্গে রাখুন।

খেয়াল রাখুন যেন বাচ্চার কানে ও নাকে পানি না যায়। পানি গেলে কান পাকা ও শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। অনেকে মিলে হৈচৈ না করে যেকোনো একজন গোসলের দায়িত্ব নিন।

নবজাতকের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কম থাকে। তাই একদম শুরুতেই ক্রিম, তেল, সুগন্ধি ব্যবহার করলে নবজাতকের চামড়ায় শুষ্কতা, এমনকি লালচে র‌্যাশের মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

তাই প্রথম সপ্তাহে ক্রিম লাগানো কিংবা অন্য কোনো কিছু লাগানো ঠিক না। কারণ শিশুর ত্বকে প্রাকৃতিক যে তেলের স্তরটি থাকে, তা সরে যাবে। শিশুর ত্বক আরো নাজুক হয়ে পড়বে। একজন নবজাতকের গোসলের নিয়ম হচ্ছে সপ্তাহে তিনবার। তবে অবশ্যই সেটা পানি ঢেলে গোসল নয়, স্পঞ্জ কিংবা নরম কাপড় হালকা কুসুম গরম পানিতে ডুবিয়ে নিংড়ে নিয়ে শরীর মুছে ফেলা।

সূত্রঃ kalerkantho

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।