বাচ্চাদের ঘামাচি হলে মায়েদের করণীয়

বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের ত্বক নরম, কোমল আর সেনসিটিভ হয়। গরমকালে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, কিন্তু যে হেতু গরমে প্রচুর ঘাম হয়, তাই শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে বাচ্চাদের শরীরে এই তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার মেকানিজ়মটা খুব শক্তিশালী নয়, তাই কোনও রকম প্রোটেকশন ছাড়া তাদের চড়া রোদে বাইরে না নিয়ে যাওয়াই ভাল। হিটস্ট্রোক বা সানস্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা তো আছেই, স্কিনে র‌্যাশ হওয়ার সমস্যাও খুব কমন। গরমে অতিরিক্ত ঘাম থেকে ব্যাকটিরিয়াল, ফাংগাল আর ভাইরাল ইনফেকশনও হয়ে থাকে। আজ আলোচনা করব বাচ্চাদের ঘামাচি নিয়ে।

ঘামাচির সমস্যা

বাংলাদেশের গরমে ঘামকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়। এই গরমে বাইরে বেরোনো মানেই বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই গলদঘর্ম। অতিরিক্ত ঘাম থেকে ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। খুব বেশি ঘাম হলে ঘর্মগ্রন্থির মুখগুলি বন্ধ হয়ে যায় আর দেখা দেয় ঘামাচি বা ঘামাচি। ডাক্তারি পরিভাষায় একে বলা হয় মিলিয়ারিয়া। এটা সাধারণত গরমকালেই হয়। তবে শীতকালেও কেউ যদি বাচ্চাকে অতিরিক্ত জামাকাপড়ে মুড়ে রাখেন, তা হলে অতিরিক্ত ঘাম জমে এমন হতে পারে। মিলিয়ারিয়া মূলত তিন প্রকারের হয় — মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনা, মিলিয়ারিয়া রুব্রা এবং মিলিয়ারিয়া প্রোফান্ডা। মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনাতে শরীর জুড়ে ছোট ছোট র‌্যাশ বেরোয়। লালচে র‌্যাশ দেখা দিলে তাকে বলা হয় মিলিয়ারিয়া রুব্রা। মাঝে মাঝে এই র‌্যাশ খুব বড় বড়ও হয়। সে ক্ষেত্রে তাকে বলে মিলিয়ারিয়া প্রোফান্ডা। সবক’টিই ঘর্মগ্রন্থির ব্লক হয়ে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। গরমে এই ঘামাচি বেরোলে সারা গা চুলকোয়। যদি রোমকূপের মধ্যে জীবাণু ঢুকে যায়, তা হলে তা থেকে সংক্রমণও ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে জায়গাটায় পুঁজ জমে ফোঁড়া হতে পারে। সেই অংশে খুব ব্যথা হয়। গরমে বাচ্চাদের ত্বকে অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ঘামের কারণে গায়ে দুর্গন্ধও কিন্তু ব্যাকটিরিয়া থেকে হয়। অনেক সময় রোদে পুড়ে ত্বক সানবার্নড হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে রোদে পোড়া অংশটি লাল হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড জ্বালা করে। এতে কোনও র‌্যাশ বেরোয় না। সানবার্নের সমস্যা প্রধানত শুকনো আবহাওয়ায় দেখা যায়। কলকাতার অতিরিক্ত আর্দ্র আবহাওয়ায় মিলিয়ারিয়া-ই বেশি হয়। এ সব ছাড়াও বেশি গরমের কারণে ত্বকে ইমপেটাইগো নামে একটি ব্যাকটিরিয়াল সংক্রমণ ঘটতে পারে। এটা স্ট্রেপ্টোকক্কাস ব্যাকটিরিয়া থেকে হয়। এটা কিন্তু মারাত্মক একটি অসুখ, যা কিডনি এবং হার্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। অনেক সময় বাচ্চাদের ত্বকের ইনফেকশন থেকে প্যারাইটাল অ্যাবসেস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে চামড়া ও পেশির মধ্যে পুঁজ জমে থাকে। একটা কথা মনে রাখবেন, এ সব ত্বকের সমস্যা কিন্তু তা শুধু হাত-পায়ে নয়, মাথায় বা নাকের মধ্যেও হতে পারে।

ঘামাচি হলে কি করবেন

বাচ্চাকে বেশি করে পানি খাওয়ান। গরমে প্রতি দিন দু’বার অবশ্যই গোসল করাবেন। গোসল করানোর সময়ে অনেকে জলে অ্যান্টিসেপ্টিক লিক্যুইড মিশিয়ে থাকেন। কয়েক ধরনের অ্যান্টিসেপ্টিক লিক্যুই়ড কিন্তু নিজেরাই ইরিটেশন তৈরি করতে পারে। কিছু অ্যান্টিসেপ্টিক থেকে কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিসও হতে পারে। তাই স্নানের জলে অ্যান্টিসেপ্টিক দেবেন না। পটাশিয়াম পার্মাঙ্গানেট দিতে পারলে সবচেয়ে ভাল। এক বালতি জলে এক চিমটেই যথেষ্ট। বাথটাবে গোসল করানোর চেয়ে রানিং ওয়াটারে গোসল করালে ভাল। এমন সাবান ব্যবহার করুন, যার পিএইচ ভ্যালু আপনার বাচ্চার স্কিনের পিএইচ ভ্যালুর সমান। এ বিষয়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে পারেন। বাচ্চার ত্বক যথাসম্ভব শুকনো রাখার চেষ্টা করুন। সব সময় তো এসি-তে থাকা সম্ভব নয়, তাই যতটা পারেন ঘাম মুছিয়ে দিন। বাচ্চাকে হালকা সুতির জামাকাপড় পরান। আঁটোসাঁটো জামা পরাবেন না। শরীরে যেন হাওয়া খেলতে পারে। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তো থাকতেই হবে। বাতাসে ধূলিকণা বেশি থাকলে এই সমস্যা বেশি হয়। এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করতে পারলে ভাল। না হলে দিনের বেলা যতক্ষণ পারেন, জানলা বন্ধ করে রাখুন।

বাজারে আজকাল হিট র‌্যাশের জন্য হাজারও পাউডার মেলে। এ সব পাউডার লাগালে ঘামাচি তো কমেই না, বরং পাউডার নিজেই ঘর্মগ্রন্থিগুলোর মুখ বন্ধ করে দেয় বলে ঘামাচি আরও বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় বেশি পাউডার লাগানোর ফলে ত্বকের ভিতরের সোয়েট ডাক্টগুলি ফেটে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্টের আশেপাশের টিস্যুতে প্রদাহ হতে পারে। পাউডারের বোরিক অ্যাসিড বা সিলিকন শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। তাই হিট র‌্যাশের মোকাবিলায় পাউডার একেবারেই নৈব নৈব চ। হিট র‌্যাশের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা হল ০.৯% সোডিয়াম ক্লোরাইড বা স্যালাইন লাগানো। যদি র‌্যাশ খুব, তা হলে কমানোর জন্য ডাক্তার অ্যান্টি-অ্যালির্জিক ওষুধও দিতে পারেন। ত্বকে সংক্রমণ ঘটলে ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক সলিউশন লাগাতে পারেন। অ্যালোভেরা বা মুলতানি মাটিও এ ক্ষেত্রে খুব ভাল। কিছু না থাকলে জায়গাটায় বরফ ঘযে দিন। তবে হিট র‌্যাশে কোনও লোশন বা অয়েন্টমেন্ট লাগাবেন না।

সুত্রঃ feminaera

লেখাটি পছন্দ হইলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
নিয়মিত সুন্দর সুন্দর টিপস পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ এ অ্যাক্টিভ থাকুন।